শাহজাদপুরে গত এক মাসে যমুনার ভাঙনে অনেকে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নের হাঁট পাঁচিল এলাকায়
শাহজাদপুরে গত এক মাসে যমুনার ভাঙনে অনেকে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নের হাঁট পাঁচিল এলাকায়

যমুনার ভাঙনে দিশাহারা শতাধিক পরিবার, বাঁধ নির্মাণে গাফিলতির অভিযোগ

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে গত এক মাসে যমুনা নদীর ভাঙনে পড়ে দিশাহারা নদীপাড়ের শতাধিক পরিবার। ভাঙনকবলিত মানুষের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নদীতীর সংরক্ষণ বাঁধের নির্মাণকাজে গাফিলতির কারণে ভাঙন থেকে বসতবাড়ি ও আবাদি জমি রক্ষা করা যাচ্ছে না।

পাউবোর সিরাজগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ভাঙনরোধে আপাতত বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। এখন ভাঙনের তীব্রতা কমে এসেছে। সেখানে নদীতীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলমান। চারটি উপাদানের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৩০০ মিটার নদীখননের কাজ শেষ হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের ৫৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। নির্ধারিত সময়েই বাকি কাজ শেষ করা হবে।

পাউবো সূত্রে জানা যায়, যমুনা নদীর ভাঙনরোধে পাউবোর ‘সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার ব্রাহ্মণগ্রাম-হাট পাঁচিল তৎসংলগ্ন এলাকায় যমুনা নদীর ডান তীর সংরক্ষণ এবং বেতিল স্পার-১ ও এনায়েতপুর স্পার-২ শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের অনুমোদন দেয় সরকার। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাজ শুরু হয়। ২০২৫ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৫৩ কোটি টাকা।

প্রকল্পের মধ্যে শাহজাদপুরে মনোকোশা ঘাট থেকে চৌহালী উপজেলার এনায়েতপুর মণ্ডলপাড়া মোড় পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ; এনায়েতপুর স্পার বাঁধ থেকে হাট পাঁচিল গ্রাম পর্যন্ত সাড়ে ছয় কিলোমিটার এলাকার নদী তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ; প্রকল্প এলাকায় ৩ হাজার ৩০০ মিটার যমুনা নদীখনন এবং বেতিল ও এনায়েতপুর এলাকায় স্পার বাঁধ শক্তিশালীকরণের কাজ করা হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে যমুনার ভাঙনকবলিত শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নের হাট পাঁচিল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভাঙনে অনেক ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। বেশ কিছু বাড়ি বিলীনের অপেক্ষায়। তাঁরা ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিতে কাজ করছেন।

ভাঙনকবলিত এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্ষা মৌসুম শেষ হয়েছে অনেক আগেই। এক মাসের বেশি সময় ধরে যমুনার পানি কমছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে নদীর পশ্চিম তীরে ভাঙন দেখা দেয়। এক মাস ধরে কখনো মৃদু, কখনো তীব্র ভাঙনে একের পর এক বসতবাড়ি ও ফসলি জমি বিলীন হয়েছে। ভাঙনের হুমকিতে আছে কবরস্থান, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

কৈজুরী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শাজাহান আলী বলেন, পাউবোর নদীতীর সংরক্ষণ বাঁধের নির্মাণকাজে ধীরগতি ও গাফিলতির কারণে তাঁরা ভাঙনের হাত থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না। বসতবাড়ি ও শত শত বিঘা কৃষিজমি, রাস্তাঘাট নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এই বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় শত শত পরিবার এখন ভূমিহীন।

কথা হয় স্থানীয় ছালমা বেগম (৬৭), ময়নাল সরকার (৭৫), আসমা খাতুন (৬২), সাহিদা খাতুন (৬০), আলমগীর হোসেন (৫০), সোনাভানু বেগমসহ (৪৮) একাধিক বাসিন্দাদের সঙ্গে। তাঁরা সবাই বলেন, সিরাজগঞ্জ পাউবোর ঠিকাদারেরা যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণকাজটি শেষ করতেন তাহলে এই বর্ষায় আমাদের গ্রামের শতাধিক ঘর নদীতে বিলীন হতো না।

আসমা খাতুন (৬২) বলেন, ‘ভাঙনে আমার শেষ সম্বল বাড়িডোও নদীতে গেছে। এহুন পোলাপান নিয়া নদীপাড়ে অন্যের বাড়িত থাকি। আমার অসুস্থ স্বামী বাজারে চেতাই পিট্যা (পিঠা) বানায়া বেচে। এহেন থাইক্যা যা আয়, তা দিয়া পাঁচজনের সংসারই চলে না। এহুন বাড়ি করমু কী দিয়্যা?’

ছালমা বেগম (৬৭) বলেন, ‘এবারের ভাঙনে আমার ৩৫ বিঘা আবাদি জমি নদীতে চলে গেছে। আমরা এখন ভূমিহীন হয়ে গেছি। এই বাঁধের নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় আমরা বড়ই আশায় ছিলাম। আর বুঝি ভাঙন হবে না। কিন্তু সেই বাঁধ নির্মাণেই কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এখন আমাদের দাবি একটাই, আমরা কোনো সাহায্য চাই না, তাড়াতাড়ি বাঁধের কাজ শেষ করা হোক।’