বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিম গানের মাধ্যমে সাম্য, মানুষের মুক্তি ও প্রেমের জয়গান গেয়েছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর গান অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। কুসংস্কারের বিরুদ্ধে শুভ, সুন্দরের পক্ষে তিনি ছিলেন সরব। তাঁর সৃষ্টি ও কর্ম নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।
সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে দুই দিনব্যাপী শাহ আবদুল করিম লোক উৎসবের সমাপনী পর্বের আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বাউলের জন্মস্থান দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামে এ উৎসব শুরু হয়। মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশের সহযোগিতায় শাহ আবদুল করিম পরিষদ ওই উৎসবের আয়োজন করেছে। শুক্রবার ছিল সমাপনী দিন।
দেশ-বিদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাউল শাহ আবদুল করিমের ভক্ত-অনুরাগীরা উৎসবে এসেছেন। মঞ্চে করিমের শিষ্যরা তাঁর জনপ্রিয় সব গান গাইছেন। কখনো তাঁর জীবনদর্শন নিয়ে চলছে আলোচনা। উৎসবের মাঠের চারপাশে বসেছে গ্রামীণ মেলা। করিমের প্রিয় নদী কালনীর কূলে প্রতিবছর এ উৎসবের আয়োজন করেন ভক্তরা। উদ্বোধনী আলোচনার পর গত শুক্রবার গভীর রাত পর্যন্ত তাঁর গান পরিবেশন করেন বাউলশিল্পীরা।
সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার উজানীগাঁও গ্রাম থেকে উৎসবে এসেছেন বাউল লাল শাহ। জানালেন, প্রায় ৩০ বছর ধরে তিনি শাহ আবদুল করিমের বাড়িতে আসেন। তাঁর বাবা ও মা করিমের মুরিদ ছিলেন। উৎসব ছাড়াও করিমের প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি জানাতে উজানধলে আসেন। লাল শাহ বলেন, ‘এই উৎসব আমাদের আনন্দের একটা উপলক্ষ। সবার সঙ্গে দেখা হয়। কিন্তু এখন গুরুজি না থাকায় মনটা ভারী থাকে।’
লাল শাহের সঙ্গে ছিলেন ভারতের নদীয়া থেকে আসা বাউল চৈতন্য কুমার মণ্ডল ও বিপদ ভঞ্জন মালাকার। তাঁরা করিম লোক উৎসবে যোগ দিতেই বাংলাদেশে এসেছেন। আলাপকালে দুই বাউলশিল্পী জানালেন, করিমের গান ভালোবাসেন বলেই উৎসবে এসেছেন। একসময় পশ্চিমবঙ্গে লালন শাহর গানের চর্চা ছিল ব্যাপক। এখন করিমের গান তরুণদের কাছে বেশ জনপ্রিয়।
উৎসবের সমাপনী দিনের আলোচনা পর্বে সভাপতিত্ব করেন বাউল শাহ আবদুল করিম পরিষদের সভাপতি ও বাউলসম্রাটের একমাত্র ছেলে শাহ নূর জালাল। অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদুর রহমান খন্দকার, বাউল শাহ আবদুল করিম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ধ্রুপদ চৌধুরী, বাউল আবদুর রহমান, শাহ আবদুল তোহায়েদ প্রমুখ।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, শাহ আবদুল করিমের কীর্তি আজ বিশ্বময় ছড়িয়ে গেছে। বাউল করিম তাঁর গানে মানুষকে ভালোবাসতে, সহজ-সরল পথে চলতে বলেছেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা উঠে এসেছে তাঁর গানে। তাই করিমের গান ও জীবনদর্শনের চর্চা বাড়াতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে তাঁর চেতনায় জাগিয়ে তুলতে হবে।
শাহ নূর জালাল বলেন, শনিবার রাতভর গানের আয়োজন আছে। সকালে সবাই যাঁর যাঁর ঠিকানায় চলে যাবেন। তিনি উৎসব আয়োজনে সহযোগিতার জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
বাংলা লোকগানের এই বাউলসম্রাটের স্মরণে ২০০৬ সাল থেকে এ উৎসব আয়োজিত হয়ে আসছে। উৎসবে সারা দেশ থেকে আসা ভক্ত-সাধকদের পাশাপাশি সংগীতপ্রেমীদের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে উজানধল গ্রাম।