আজ সোমবার ঢাকার সাভারে রানা প্লাজা ধসের ১০ বছর। অনেক বছর পেরিয়ে গেলেও ওই দুর্ঘটনায় গাইবান্ধার হতাহত ব্যক্তিদের পরিবারগুলো ভালো নেই।
গাইবান্ধা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসে গাইবান্ধার নারীসহ ৪৯ জন নিহত হন। এ ছাড়া ১১ নিখোঁজ ও শতাধিক আহত হন।
ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রীর অনুদান হিসেবে হতাহত ব্যক্তিদের পরিবারপ্রতি ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া সে সময় অনেক পরিবার এই পরিমাণ টাকার চেয়ে বেশি টাকাও পায়। তবে গত ১০ বছরে আর কোনো আর্থিক সহায়তা মেলেনি।
গতকাল রোববার কথা হয় রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় ডান পা হারানো গাইবান্ধার সোনিয়া বেগমের (২৭) সঙ্গে। সোনিয়ার বাবার বাড়ি জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ দামোদরপুর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের সায়েব মণ্ডলের মেয়ে। ২০১১ সালে একই ইউনিয়নের পূর্ব দামোদরপুর গ্রামের নজির উদ্দিনের ছেলে মিজানুর রহমানের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের দুই বছর পর একটু সচ্ছলতার আশায় সোনিয়া-মিজানুর দম্পতি রানা প্লাজার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নেন। চাকরির ২২ দিনের মাথায় ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ভবন ধসের ঘটনা ঘটে। সেদিন মিজানুর অন্য কাজে বাইরে থাকায় বেঁচে যান। ডান পা হারান সোনিয়া।
সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দেন সোনিয়া বেগম। তিনি বলেন, ঘটনার দিন তিনি সপ্তম তলায় আটকে পড়েন। কিছু বোঝার আগেই হঠাৎ বিকট শব্দে ভবনটি ধসে পড়ে। দৌড়ে বের হওয়ার সময় তাঁর ডান পা ভবনের একটি বিধ্বস্ত পিলারের নিচে চাপা পড়ে। চেষ্টা করেও পা বের করতে পারছিলেন না। তিন দিন পর উদ্ধারকর্মীরা তাঁকে উদ্ধার করেন। এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর ডান পা কোমরের নিচ থেকে কেটে ফেলা হয়। তিনি বলেন, ‘পা হারিয়ে কষ্ট করে চলছি। কিন্তু যাদের কারণে পা হারিয়ে পঙ্গু হলাম, সেই দোষী ব্যক্তিদের বিচার দেখতে পারলাম না। ঘটনার পর অনেক প্রতিশ্রুতি শুনেছি। কোনোটিই বাস্তবায়িত হয়নি। স্বামীর চায়ের দোকানের আয়ে সংসার ঠিকমতো চলছে না। ধারদেনা করে চলতে হচ্ছে।’
সোনিয়ার স্বামী মিজানুর রহমান বলেন, সরকার চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তিনি চাকরি পাননি।
রানা প্লাজা ধসে নিহত হন সাদুল্লাপুর উপজেলার কিশামত হলদিয়া গ্রামের স্মৃতি রানী (২৫)। তাঁর এক স্বজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাঁদের অনুদানের টাকার চেক দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল, নিহত পরিবারের একজন সদস্যকে চাকরি দেওয়া হবে। পরে চাকরি তো দূরের কথা, কেউ খোঁজও নেয়নি।
একই ইউনিয়নের দক্ষিণ ভাঙ্গামোড় গ্রামের দিনমজুর ওয়াহেদ আলীর ছেলে সবুজ মিয়া (১৮) ভবন ধসের ঘটনায় নিহত হন। ঘটনার ১৬ দিন পর মুঠোফোনের সূত্র ধরে ছেলের হাড়গোড় ফিরে পান মা–বাবা। সবুজ মিয়ার এক আত্মীয় বলেন, ‘সোরকার পোত্তেক নিহত পরিবারোত থ্যাকি এ্যাকঝনাক করি চাকরি দিব্যার চাচিলো। আজও চাকরি দ্যায় নাই।’
ভবন ধসে দক্ষিণ ভাঙ্গামোড় গ্রামের আবদুল বারীর মেয়ে বীথি খাতুন (২১) ও সোনা মিয়ার স্ত্রী কামনা খাতুন (২২) নিখোঁজ হন। এখনো তাঁদের সন্ধান মেলেনি।
এসব বিষয়ে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জুয়েল মিয়া মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, রানা প্লাজা ধসের ঘটনার পরপরই সরকারের পক্ষ থেকে হতাহত ব্যক্তিদের পরিবারগুলোকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। এরপর পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের বিষয়ে কোনো সরকারি নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।