নাটোরের সিংড়া উপজেলার সেই ‘খিরির’ গাছটি ঝড়ে ভেঙে পড়েছে। গত শনিবার রাতে গাছটি গোড়া থেকে ভেঙে পড়ে। বহু বছরের পুরোনো বিরল প্রজাতির গাছটি একনজর দেখতে অসংখ্য বৃক্ষপ্রেমী সিংড়ায় আসতেন। ভেঙে পড়ার খবর শুনে স্থানীয় লোকজন ভেঙে পড়া গাছটি শেষবারের মতো দেখতে ভিড় করছেন।
উপজেলার সুকাশ ইউনিয়নের দুলশী গ্রামে চলনবিল ঘেঁষে উঁচু ঢিবির ওপর বড় আকৃতির একটি গাছ শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে ছিল। গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিদের ভাষ্য, তাঁরা জন্মের পর থেকে গাছটি দেখে আসছেন। এমনকি তাঁদের পূর্বপুরুষেরাও গাছটি এভাবেই দেখেছেন। তবে গাছটির বয়স ঠিক কত, তা নির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারেননি।
উদ্ভিদ–গবেষকদের মতে, গাছটির বয়স ২০০ বছরের বেশি। সর্বশেষ গাছটির উচ্চতা ছিল ৫০ ফুট এবং আয়তন ছিল প্রায় ১৫০ বর্গফুট। জ্যেষ্ঠ মাসে গাছটিতে আঙুরদানার মতো ফল ধরত। ফলের স্বাদ অনেকটা ক্ষীরের মতো। এ জন্য অনেকে গাছটিকে খিরির গাছ বলেন। এই গাছের কোনো বংশবিস্তার হয়নি। ফলের বীজ থেকে চারা হয়নি। কলম করলেও নতুন ডাল হতো না। বিচিত্র বৈশিষ্ট্য হওয়ায় দেশের নানা প্রান্ত থেকে বৃক্ষপ্রেমীরা গাছটি দেখতে আসতেন। উদ্ভিদ গবেষকেরা গাছটি সম্পর্কে জানার জন্য দুলশী গ্রাম ঘুরে গেছেন। প্রথম আলোসহ বিভিন্ন সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমেও এই গাছ নিয়ে বহু প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পুলিশ কর্মকর্তারা গাছটি পরিদর্শনে গিয়ে একটি স্মারক স্তম্ভ নির্মাণ করেছেন। এই স্তম্ভে গাছটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘বৃক্ষ মানিক’। গাছটির ঘন পাতার ডালপালা ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকায় স্থানীয় শ্রমজীবী মানুষ রোদের সময় এখানে বসে বিশ্রাম নিতেন।
শনিবার রাতে দমকা হাওয়ায় গাছটি আচমকা ভেঙে পড়ায় স্থানীয় লোকজন কষ্ট পেয়েছেন। সকাল হতেই শত শত লোক ছুটে এসেছেন ওই গাছতলায়। ছলিম উদ্দিন (৮২) নামের এক প্রবীণ কৃষক বলেন, তিনি ছোটবেলা থেকে গাছটি দেখে আসছেন। তিনি তাঁর দাদার কাছেও গাছটির গল্প শুনেছেন। তাই শেষবারের মতো গাছটির ভাঙা অংশ দেখার জন্য রোববার বিকেলে দুলশী গ্রামে গিয়েছিলেন। গাছটি গোড়া থেকে ভেঙে পড়েছে। তাই গাছটি আর বাঁচার কোনো সম্ভাবনা নেই। এটি এখন শুধুই স্মৃতি।
সারা দেশের নানা বৈশিষ্ট্যের উদ্ভিদ নিয়ে লেখালেখি করেন মোকারম হোসেন। গাছটি ভেঙে পড়ার খবর শুনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পত্রিকার মাধ্যমে গাছটি সম্পর্কে জানার পর আমি সরেজমিনে গাছটি দেখে এসেছিলাম। স্থানীয় লোকজনের কাছে গাছটির সুনির্দিষ্ট কোনো নাম না থাকলেও এটি সফেদা প্রজাতির বৃক্ষ। লেখকদের কাছে গাছটি খিরির গাছ নামে পরিচিত। গাছটির বয়স ২০০ বছরের বেশি হবে। গাছটি নিয়ে সবার মধ্যে আগ্রহ ছিল। এই গাছ বর্তমানে বিরল। তবে ঢাকার লেদার টেকনোলজি কলেজ চত্বরে একটি ও রমনা পার্কে একটি খিরির গাছ আছে।’