কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে মাটি খুঁড়ে পাওয়া মর্টারশেলকে গুপধন ভেবে কাটতে গিয়েছিলেন লেদমিস্ত্রি হামিদুর রহমান ওরফে বাবু (৩২)। তবে মর্টারশেলের বিস্ফোরণে হামিদুরের এক পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বর্তমানে তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হামিদুরের আয় দিয়েই সংসার চলত। তবে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্যের চিকিৎসার খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তাঁর স্বজনেরা।
হামিদুর রহমানের বাড়ি উপজেলার দেওয়ানের খামার গ্রামে। পরিবারে তাঁর স্ত্রী, বিধবা মা, দুই মেয়ে আছে। হামিদুরের বড় মেয়ে বাবলী আক্তার (১১) স্থানীয় একটি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। আরেক মেয়ের বয়স মাত্র ১৩ দিন।
সম্প্রতি দেওয়ানের খামার গ্রামের আজিজ কমান্ডারের বাড়ির পাশের একটি পুকুরের খননকাজ করার সময় হামিদুরের মামা আবদুল গফুর লোহার একটি ভারী বস্তু পান। আবদুল গফুর লোহার বস্তুটি গুপ্তধন ভেবে বিষয়টি গোপন রাখেন। গত মঙ্গলবার রাতে হামিদুর নিজ বাড়ির রান্নাঘরে বিদ্যুচ্চালিত লোহা কাটার যন্ত্র দিয়ে মর্টারশেলটি কাটতে চেষ্টা করেন। এ সময় মর্টারশেলটি বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। এ সময় হামিদুর রহমানের ডান পায়ের গোড়ালিসহ হাঁটুর নিচের অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং অন্য পা ঝলসে যায়। হামিদুরকে প্রথমে ভূরুঙ্গামারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে গতকাল বুধবার সকালে চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচার করে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া ডান পা কেটে ফেলেন।
আহত হামিদুর রহমানের মা হামিদা বেওয়া বলেন, ‘ছাওয়াটা (ছেলেটা) লেদমিস্ত্রির কাম করি সংসার চালায়। মাটির নিচে পাওয়া লোহার বাক্স থেকে গুপ্তধন উদ্ধার করবের যায়া এল্যা ছাওয়া পঙ্গু হয়া গেইল। গরিব মানুষ এল্যা বাড়ির খরচ চালাই কেদ্যোন (কেমন) করি আর ছাওয়ারে চিকিৎসা করাই কেদ্যোন করি। মাথার ওপর আকাশ ভাঙ্গি পড়িল।’
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হামিদুরের সঙ্গে আছেন তাঁর ছোট বোন বানেছা বেগম। তিনি বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর মামা (আবদুল গফুর) হাতে করে একটা লোহার জিনিস নিয়ে বাসায় আসেন। এরপর বাবু ভাইকে (হামিদুর) বলেন, বাবু এইটা একটু কেটে দেখ তো। তারপর বাবু ভাই লোহা কাটার যন্ত্র দিয়ে সেটি কাটতে থাকেন। এ সময় আমরা দূরেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ করে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হলো। ভাইয়ের পা ছিঁড়ে গেল। ভাইয়ের টাকায় সংসার চলে। সে দৈনিক মজুরিতে কাজ করে সংসার চালাত। এখন তাঁর চিকিৎসার জন্য প্রায় দুই লাখ টাকা দরকার। সেই টাকা কোথা থেকে আসবে আমরা জানি না।’
আহত হামিদুর মুঠোফোনে বলেন, ‘কুড়িয়ে পাওয়া লোহার বস্তুটি যে মর্টারশেল ছিল, বুঝতে পারিনি। এখন আমি আমার পা উঠাতে পারছি না। ডাক্তার বলেছে, আজ অপারেশন করাবে। কত টাকা লাগবে আল্লাহ জানে!’
এদিকে মঙ্গলবার রাতে মর্টারশেল বিস্ফোরণে হামিদুর রহমান আহত হওয়ার পর থেকে এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে হামিদুরের মামা আবদুল গফুর। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভূরুঙ্গামারী সদর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. সোহারাব আলীর নেতৃত্বে পুকুর সংস্করণের কাজ চলছিল। সেখানে হামিদুরের মামা আবদুল গফুরসহ আরও ৪৫ জন শ্রমিক কাজ করছিলেন। ওই কাজ করার সময়ই লোহার বস্তুটি পান আবদুল গফুর। এর আগেও ওই পুকুর থেকে মাটি খুঁড়ে মূল্যবান বস্তু পাওয়া গেছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শ্রমিক দাবি করেছেন।
তবে বিষয়টি মিথ্যা দাবি করে ইউপি সদস্য সোহারাব আলী বলেন, ‘এসব মিথ্যা তথ্য। মাটি কাটার সময় ৪৫ জন শ্রমিক ছিল। সোনার জিনিস পাওয়ার খবর কী ঢাকা থাকে ভাইজান? এসব আমার নামে মিথ্যা ছড়ানো হচ্ছে।’
সহকারী পুলিশ সুপার (ভূরুঙ্গামারী সার্কেল) মোর্শেদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মর্টারশেল বিস্ফোরণের খবর শুনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছিলাম। তবে পুকুরে এর আগে মূল্যবান কোনো বস্তু পাওয়ার ঘটনাটি আমাকে কেউ বলেননি।’