‘ফুলবাড়ীতে কয়লা তোলার চেষ্টা করলে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে’

ফুলবাড়ী কয়লাখনিবিরোধী ট্র্যাজেডি দিবস উপলক্ষে আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে এক শোক শোভাযাত্রা করা হয়। শনিবার সকাল ১০টায় উপজেলার নিমতলা মোড় এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব আনু মুহাম্মদ বলেছেন, দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর গণ-অভ্যুত্থান শুধু কয়লা সম্পদ রক্ষার আন্দোলন নয়, মানুষের জীবন–জীবিকার আন্দোলন। সম্প্রতি দেশে বিদ্যুৎ–সংকট চলছে। এটাকে ইস্যু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নতুন করে কয়লা তোলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। যদি কেউ ভাবেন ফুলবাড়ী আন্দোলন শেষ হয়েছে, তাহলে তাঁরা ভুল ভাবছেন। কয়লা তোলার ষড়যন্ত্র হলে ফুলবাড়ীবাসী এর সমুচিত জবাব দেবে।

আজ শনিবার বেলা ১১টায় ফুলবাড়ী কয়লাখনিবিরোধী ট্র্যাজেডি দিবস উপলক্ষে এক প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন আনু মুহাম্মদ। এর আগে সকাল ৯টায় কয়লাখনিবিরোধী আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে শোক শোভাযাত্রা করা হয়। এরপর স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ফুলবাড়ী পৌরসভার মেয়র মাহমুদ আলম, গণ-সংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি। প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কমিটির ফুলবাড়ী উপজেলা শাখার আহ্বায়ক সৈয়দ সাইফুল ইসলাম।

বক্তারা বলেন, ২৬ আগস্ট ২০০৬ সালে ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন না করার প্রতিবাদে স্থানীয় লোকজন বিক্ষোভ করেছিলেন। এ প্রকল্প নিয়েছিল এশিয়া এনার্জি নামের একটি বহুজাতিক কোম্পানি। সেদিন কোম্পানির কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করার চেষ্টা করলে তৎকালীন বিডিআর ও পুলিশের গুলিতে তরিকুল, আমিন ও সালেকিন নামের তিন যুবক প্রাণ হারান। আহত হন দুই শতাধিক নারী-পুরুষ। আন্দোলনের তীব্রতার মুখে ৩০ আগস্ট বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে নিয়ে পার্বতীপুর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক বৈঠক করে। সেখানে ‘৬ দফা ফুলবাড়ী চুক্তি’ করা হয়। এরপর থেকে দিনটিকে ‘ফুলবাড়ী দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছেন স্থানীয় লোকজন।

আনু মুহাম্মদ বলেন, ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট ফুলবাড়ীর গণ-অভ্যুত্থান শুধু কয়লা সম্পদ রক্ষার আন্দোলন নয়। বাংলাদেশ রক্ষার আন্দোলন, একটি স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলন। জনগণের সম্মতি ছাড়া ফুলবাড়ী থেকে কয়লা উত্তোলন করা যাবে না। উন্নয়নের নামে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো যাবে না।

রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে আনু মুহাম্মদ বলেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনে ফুলবাড়ীর ছয় দফা পূর্ণ বাস্তবায়ন যেন তাঁদের অ্যাজেন্ডার মধ্যে আসে। ক্ষমতায় যে–ই আসুক, তাদের সেই অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ, ফুলবাড়ীর আন্দোলন প্রাণ–প্রকৃতি রক্ষার আন্দোলন, দেশের জনগণের আন্দোলন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সে সময় বিরোধী দলের নেত্রী হিসেবে ফুলবাড়ীর বীর জনতাকে সমর্থন দিয়েছিলেন। দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলেও সেই ৬ দফার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়নি। এ সময় তিনি অবিলম্বে ছয় দফা দাবির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নসহ এশিয়া এনার্জি কোম্পানিকে দেশ থেকে বহিষ্কার করার আহ্বান জানান।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির জেলা সভাপতি মেহেরুল ইসলাম, কয়লাবিরোধী আন্দোলনের নেতা হামিদুল হক, এম এ কাইয়ুম, এস এম নুরুজ্জামান, শফিকুল ইসলাম শিকদার প্রমুখ।