গত সপ্তাহে ভালো মানের ৬০ কেজি ওজনের এক বস্তা আলুর দাম ছিল ২ হাজার ৭০০ টাকা। গত শুক্রবার এর দাম আরও ১০০ টাকা বেড়েছে।
মাদারীপুরে জেলার হিমাগারে ৬০ হাজার বস্তা আলু আছে। এরপরও জেলার হাটবাজারগুলোতে সরকারি নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি হচ্ছে না। আড়তমালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বেশি দামে আলু বিক্রি করছেন। নিত্যপণের দাম তদারকির দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়ায় আলুর দাম কমছে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ক্রেতারা।
১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় এক সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি খুচরা পর্যায়ে আলুর দাম ৩৬ টাকা ও হিমাগারের গেটে ২৬ থেকে ২৭ টাকা নির্ধারণ করে দেন। কিন্তু মাদারীপুরে দাম নির্ধারণ করার পর দাম না কমে বরং দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে প্রতি কেজি আলু খুচরা পর্যায়ে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গত শুক্রবার জেলা শহরের চারটি বাজার ঘুরে জানা গেছে, সাধারণ ক্রেতাদের নির্ধারিত দামের পরিবর্তে অতিরিক্ত দাম দিয়ে আলু কিনতে হচ্ছে। যদিও বাজারে পাইকারি ও খুচরা দোকানগুলোয় আলুর কোনো সংকট দেখা যায়নি।
গত শুক্রবার সরেজমিনে শহরের পুরান বাজার, ইটেরপুল, চৌরাস্তা ও কুলপদী বাজারে গিয়ে দেখা যায়, শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় কাঁচাবাজারে সাধারণ ক্রেতাদের বাড়তি চাপ। সব ধরনের শাকসবজির দাম তুলনামূলক বেশি। বাজারে আসা ক্রেতাদের সবাই কম বেশি আলু কিনে বাজারের ব্যাগে ভরছেন। দাম বেশি হওয়ায় চাহিদা অনুসারে আলু না কিনতে পারলেও ৫০০ গ্রামের নিচে কেউ আলু কিনছেন না। এসব বাজারে প্রতি কেজি আলু ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শুক্রবার পুরানবাজার কাঁচাবাজার পট্টিতে বাজার করতে আসেন চাকরিজীবী আবদুল হক। আলু দাম নিয়ে প্রশ্ন করতে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘৫০ টাকা দিয়া এক কেজি আলু কিনলাম। যেই আলু কয়েক মাস আগেও ১৫ টাকা দিয়ে কিনেছি, সেই আলুর দাম এখন নাগালের বাইরে। শুধু আলু নয়, সব ধরনের শাকসবজির দাম বেশি। বাজারে দামের আগুন লেগেছে। এক হাজার টাকায়ও বাজারের ব্যাগ ভরে না। খুব কষ্টে আছি, ভাই।’
বাজারের সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে আলুর দাম বেড়েছে। বাজার সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই।
শহরের পুরানবাজার এলাকার খুচরা বিক্রেতা ইলিয়াস আলী বলেন, ‘গত সপ্তাহে ভালো মানের ৬০ কেজি ওজনের এক বস্তা আলুর দাম ছিল ২ হাজার ৭০০ টাকা। গত শুক্রবার তার দাম আরও ১০০ টাকা বেড়েছে। এ কারণে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা দরে ক্রেতাদের কাছে আলু বিক্রি করছি। এখানে আমাদের কোনো মজুত নেই। পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ছে, তাই আমারও দাম বাড়ানো ছাড়া কিছুই করার নেই। যদি পাইকারেরা দাম কমান, তাহলে আমরাও কম দাম বা সরকারি দামের নিচেও আলু দিতে পারব। তবে খুব শিগগির আলুর দাম কমার সম্ভাবনা আমরা দেখছি না।’
এই বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, ‘আলু উৎপাদন এবার কম, তাই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। তা ছাড়া চাষিরা যদি কম দামে আলু না দেন, তাহলে আমরা কম দামে বিক্রি করব কীভাবে? সরকার নির্ধারিত দামে আলু আমরা কিনতেও পারিনি, তাই ওই দামে বিক্রি সম্ভব নয়।’
শুক্রবার কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। তাঁরা বেশি দামে আলু বিক্রি করেননি। ডাসার উপজেলার পূর্ব খাতিয়াল এলাকার কৃষক মোশারফ খান। তিনি ৬ বিঘা জমিতে প্রায় ৪০০ মণ আলু পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আলু চাষে খরচ বেশি, লাভ কম। এ বছর শুরুতে আলু প্রতি মণ ৯০০ টাকায় বিক্রি করছি। গত মাসে কিছু আলুর দাম বাড়ায় প্রতি মণ ১ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি করছি।’
এ বিষয়ে পুরানবাজারের আড়তদার মো. জসিম বলেন, চলতি মৌসুমে ৩০০ বস্তা আলু হিমাগারে রেখেছেন। তিনি কৃষকদের থেকে বস্তা প্রতি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা দরে আলু সংগ্রহ করে হিমাগারে রেখেছেন। তিনি খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকা দরে আলু বিক্রি করছেন।
মাদারীপুর হিমাগারের ব্যবস্থাপক মো. আবদুল করিম বলেন, এবার এখনো হিমাগারে পর্যাপ্ত আলু মজুত রয়েছে। ব্যবসায়ীরা চাইলেই বাজারে আলু ছাড়া সম্ভব। হিমাগার কর্তৃপক্ষ সর্বদাই প্রস্তুত রয়েছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মাদারীপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘কিন্তু অসাধু কিছু ব্যবসায়ী আলু মজুত করে কৃত্রিম সংকট দেখাচ্ছেন। আমরা অভিযান চালিয়ে কিছু ব্যবসায়ীকে সতর্ক করেছি। জরিমানাও করেছি।’