নরসিংদীর বেলাব উপজেলায় একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাঁর বাসায় ছাত্রীকে ডেকে নিয়ে ‘অশালীন’ কথাবার্তা বলেছেন, এমন একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ ও শাস্তির দাবিতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেছেন একদল শিক্ষার্থী। পরে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে আলোচনায় বসেন।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী মহাসড়কের বারৈচা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবরোধ করে। এ ঘটনায় বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ।
ওই শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষকতা করছেন। তিনি সহকারী শিক্ষক থেকে ধাপে ধাপে প্রধান শিক্ষক হন। অন্যদিকে যে ছাত্রীর সঙ্গে তাঁর অশালীন কথাবার্তার অভিযোগ উঠেছে, সে বিদ্যালয়টির প্রাক্তন শিক্ষার্থী, বর্তমানে উচ্চমাধ্যমিকে পড়ে।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ সকালে বিদ্যালয়টিতে মিডটার্ম পরীক্ষা চলছিল। অডিও রেকর্ডটি ছড়িয়ে পড়ার খবরে পরীক্ষা বন্ধ রেখেই দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী বাইরে বেরিয়ে আসে। সকাল ১০টা থেকে তারা বিদ্যালয় ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করে। এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দেয়। এ কারণে প্রায় ৩০ মিনিটের জন্য মহাসড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
দুপুর ১২টার দিকে বেলাব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আয়েশা জান্নাত ও রায়পুরা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সত্যজিৎ কুমার ঘোষ ঘটনাস্থলে যান। তাঁরা উত্তেজিত শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে নিয়ে যান। বেলা তিনটা পর্যন্ত বিদ্যালয়টির শিক্ষকদের নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেন তাঁরা। পরে এ বিষয়ে তদন্তের সিদ্ধান্ত হয়। প্রধান শিক্ষককে থানায় নেওয়া হয়। এরপর শিক্ষার্থীরা ফিরে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদ্যালয়টিতে শিক্ষকদের মধ্যে ‘গ্রুপিং’ আছে। ছড়িয়ে পড়া অডিওটিকে কেন্দ্র করে একটি পক্ষ প্রধান শিক্ষককে সরিয়ে দিতে চাইছে। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধেও শিক্ষার্থীদের রয়েছে একাধিক অভিযোগ।
রায়পুরা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সত্যজিৎ কুমার ঘোষ বলেন, ‘কথোপকথনের যে অডিও ছড়িয়েছে, সে ঘটনা বছরখানেক আগের। তবে তা ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে সম্প্রতি। আমরা ওই ছাত্রী ও তার বাবাকে থানায় আসতে বলেছি। এ ছাড়া ওই প্রধান শিক্ষককে থানায় নেওয়া হয়েছে। অডিওসহ পুরো বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।’
ইউএনও আয়েশা জান্নাত বলেন, ‘ছড়িয়ে পড়া অডিওটি সঠিক কি না, তা তদন্ত করে দেখতে পুলিশকে বলা হয়েছে। পুলিশি তদন্তে যদি প্রমাণিত হয় ওই প্রধান শিক্ষক নৈতিক স্খলনজনিত কাজ করেছেন, তবে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিস্থিতি সামলাতে তাঁকে পুলিশের জিম্মায় রাখা হয়েছে।’