আশুলিয়ায় আবারও শ্রমিকদের বিক্ষোভ, কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ, আহত ৩

বিক্ষোভের সময় ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি হয়। শনিবার সকালে সভার আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায়
ছবি: শামসুজ্জামান

বেতন বাড়ানোর দাবিতে ঢাকার সাভারের আশুলিয়ার পোশাক কারখানার শ্রমিকদের আবারও বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। আজ শনিবার সকাল থেকে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় বিক্ষোভ হয়। পরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সঙ্গে দফায় দফায় পুলিশের পাল্টিপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি হয়। এ সময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও ছররা গুলি ছোড়ে। এতে অন্তত তিনজন আহত হয়েছেন। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা বেশ কয়েকটি কারখানার ফটক ভাঙচুর করেছেন।

আহত তিনজন হলেন আমির হোসেন, মো. শামিম ও মো. তাজউদ্দিন। তাঁদের আশুলিয়ার নারী ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের শরীরের বিভিন্ন অংশে ছররা গুলির আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। তাঁদের মধ্যে ভ্যানচালক আমির হোসেন ছররা গুলিতে আহত হয়েছেন।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ভ্যানচালক মো. আমির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকালে বাইপাইল থিকা কাঁচামাল নিয়া জামগড়া এলাকায় নামাইয়া ফিরতেছিলাম। এমন সময় গুলি আইসা লাগছে।’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আশুলিয়ায় জামগড়া এলাকার কারখানাগুলোয় আজ সকাল থেকে কাজ শুরু করেন বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকেরা। তবে বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা হাজিরা দিয়েই বের হয়ে যান। পরে তাঁরা আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল সড়কের জামগড়া এলাকার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় পুলিশ সদস্যরা তাঁদের সড়ক থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেও তাঁরা সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ তাঁদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় ছররা গুলিও ছোড়ে পুলিশ।

ছররা গুলিতে আহত একজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শনিবার আশুলিয়ার নারী ও শিশু হাসপাতালে

আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক জয় ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকালে তিনজন স্প্রিন্টারের আঘাত পাওয়া রোগী পেয়েছিলাম। তাঁদের মধ্যে একজনকে চিকিৎসা দিয়ে বাসায় পাঠানো হয়েছে। অপর দুজনকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।’

জামগড়া এলাকার একটি কারখানার শ্রমিক মো. রাসেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সকালে কাজ করতেছিলাম। আমাদের ফ্যাক্টরিতে কোনো ঝামেলা নেই। একটু পর বাইরের শ্রমিকেরা ঝামেলা করায় আমরা বের হয়ে বাসায় চলে যাইতেছি।’

আজ সকাল ৯টার দিকে জামগড়া এলাকার কয়েকটি স্থানে শ্রমিকদের বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। কিছুক্ষণ পরপরই পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। বেশ কয়েকটি কারখানার ফটকের সামনে পড়ে ছিল কারখানার ফটকের কাচের ভাঙা খণ্ড।কয়েকটি কারখানার শ্রমিকদের সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বের হয়ে যেতে দেখা যায়।
ফটক ভাঙচুর হওয়া প্রাইম ক্যাপ বিডি লিমিটেডের নিরাপত্তারক্ষী মো. রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কারখানায় সকাল থেকেই কাজ চলছিল। সকাল ১০টার দিকে কিছু শ্রমিক কারখানার সামনে এসে চিল্লাচিল্লি শুরু করে আমাদের শ্রমিকদের বের হতে বলে। কিন্তু কেউ বের হননি। এরপর বাইরের শ্রমিকেরা গেট ভাঙচুর করেন। পরে পুলিশ ধাওয়া দিলে তাঁরা চলে যায়।’

আহত মো. শামিম বলেন, ‘খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে জামগড়া এলাকা থেকে খালাকে নিতে আসছিলাম। এমন সময় পুলিশ গ্যাস মারলে বসে পড়ি। পরে দেখি পিঠ জ্বলতেছে, রক্ত বের হচ্ছে।’

বেলা ১১টার দিকে ঢাকা জেলা (উত্তর) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা সড়কে নেমে সড়ক অবরোধ ও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে তাঁদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। এখন পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক।