ত্বকীসহ সব হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে আলোক প্রজ্বালন

তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার চিহ্নিত ঘাতকদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের আলোক প্রজ্জ্বালন। শনিবার সন্ধ্যায় নগরীর আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার ও মিলনায়তন প্রাঙ্গণে
ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ১১৫ মাস উপলক্ষে ঘাতকদের গ্রেপ্তার এবং বিচারের দাবিতে আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করেছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। শনিবার সন্ধ্যায় নগরের আলী আহাম্মদ চুনকা নগর মিলনায়তন প্রাঙ্গণে এ কর্মসূচি পালিত হয়। এতে ত্বকীসহ সব হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়েছেন বক্তারা।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদের সঞ্চালনায় ও সভাপতি ভবানী শংকর রায়ের সভাপতিত্বে মোমশিখা প্রজ্বালন কর্মচিতে অংশ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারোয়ার আলী বলেন, বিচার বন্ধ রাখা বা বিলম্বিত করা এটি কোনো গণতন্ত্রের চরিত্র নয়। সরকারকে ত্বকী হত্যার বিচার করতে হবে। ত্বকীসহ সব হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে।

কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন ত্বকীর বাবা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এ বি সিদ্দিক, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি জিয়াউল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মনি সুপান্থ, ন্যাপ জেলা সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, গণসংহতি আন্দোলন জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, শ্রুতি সাংস্কৃতিক একাডেমির সভাপতি মাইনুদ্দিন মানিক, সামাজিক সংগঠন সমমনার সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ সাহা প্রমুখ।

দেশে বিচারব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে এবং নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে সরকার দলীয় বাহিনীতে পরিণত করেছে মন্তব্য করে রফিউর রাব্বি বলেন, ‘দেশে বিচারব্যবস্থা স্বাধীন হলে একটি হত্যার বিচারের অভিযোগ তৈরি হয়েও তা সাড়ে ৯ বছর আটকে থাকে না। ত্বকীর ঘাতকেরা সরকারদলীয় বলেই ত্বকী হত্যার বিচার করছে না সরকার। জনগণের বিপক্ষে গিয়ে সরকার নারায়ণগঞ্জে একটি খুনি পরিবারের পক্ষ নিয়েছে। আমরা এই গণবিরোধী বিচারব্যবস্থার পরিবর্তন চাই। আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ফিরে পেতে চাই।’

রফিউর রাব্বি আরও বলেন, তদন্ত শেষ না করার যুক্তিতে সাড়ে ১০ বছরে ৯২ বার সাগর-রুনি হত্যার অভিযোগপত্রের তারিখ বদলেছে। অথচ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সরকারদলীয় কেউ মামলা করলে চার-পাঁচ ঘণ্টায় তদন্ত শেষ করে পুলিশ অপরাধী সাব্যস্ত করে ভিন্ন মতাবলম্বীদের জেলে পুরছে। ত্বকী হত্যার বিচারের নির্দেশ দিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান ত্বকীর বাবা।

২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরের শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন ত্বকী। দুই দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব জানিয়েছিল, নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের নির্দেশে তাদেরই টর্চারসেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছে। অচিরেই তারা অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করবে। কিন্তু সে অভিযোগপত্র আজও আদালতে পেশ করা হয়নি।

ত্বকী হত্যার পর থেকে বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।