৬ মাস পর ৫১৭ আরোহী নিয়ে টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন পৌঁছাল জাহাজ

জাহাজ থেকে নেমে সেন্ট মার্টিনে যাচ্ছেন পর্যটকেরা। বুধবার দুপুরে সেন্ট মার্টিন জেটিঘাটে
 ছবি: প্রথম আলো

দীর্ঘ প্রায় ছয় মাস বন্ধ থাকার পর কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। আজ বুধবার সকাল সাড়ে নয়টায় টেকনাফের দমদমিয়া অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) জাহাজ ঘাট থেকে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে এমভি বার আউলিয়া জাহাজটি। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পৌঁছায় জাহাজটি। প্রথম দিনেই জাহাজে ৫১৭ জন আরোহী ছিলেন।

বিআইডব্লিউটিএ চট্টগ্রামের উপপরিচালক ও টেকনাফ অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নয়ন শীল প্রথম আলোকে বলেন, এ নৌপথে চলাচলের জন্য আরও কয়েকটি জাহাজ ছাড়পত্র পেয়েছে। জেলা প্রশাসনের অনুমতি পেলে সেগুলো শিগগিরই পর্যটক পরিবহন শুরু করবে। তবে আজ এমভি বার আউলিয়া জাহাজে করে ৫১৭ জন সেন্ট মার্টিনে গেছেন। জাহাজটির যাত্রী ধারণক্ষমতা ৮৫০ জন।

সাগর উত্তাল হওয়ার পাশাপাশি কালবৈশাখীর আশঙ্কায় দুর্ঘটনা এড়াতে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে জাহাজ চলাচল শুরু হয় চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি। পরে ১৮ মার্চ থেকে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এ পথে জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেয়। ওই সময় টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন থেকে কেয়ারি সিন্দবাদ, কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড ডাইন, আটলান্টিক, শহীদ আব্দুস সালাম, এমভি পারিজাত, এমভি রাজহংস, সুকান্ত বাবু, এমভি বে ক্রুজ এবং এমভি বার আউলিয়া জাহাজ চলাচল করেছিল।

সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, আজ সেন্ট মার্টিন দ্বীপের মানুষের মনে ঈদের আনন্দ লক্ষ করা যাচ্ছে। পর্যটন দিবসে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে জাহাজ চলাচল শুরু হওয়ায় দ্বীপে এ উৎসবের আমেজ লেগেছে। অধিকাংশ হোটেল-মোটেল ও কটেজে সাজ সাজ রব।

বুধবার দুপুরে সেন্ট মার্টিন জেটিঘাটে পৌঁছায় পর্যটকবাহী জাহাজটি

২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস পালন উপলক্ষে সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরানের সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। পরে পরীক্ষামূলকভাবে এক সপ্তাহের জন্য একটি জাহাজকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী বলেন, এক সপ্তাহের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে এমভি বার আউলিয়া নামের জাহাজটিকে পর্যটক পরিবহনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী জাহাজগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আজ সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের জন্য আসা পর্যটকেরা টেকনাফের দমদমিয়ায় বিআইডব্লিউটিএর জাহাজঘাটের টিকিট কাউন্টারের সামনে ভিড় করেন। অনেকে টিকিট সংগ্রহ করে জাহাজে নির্দিষ্ট আসনে বসেন। ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড, বিআইডব্লিউটিএ ও জাহাজ কর্তৃপক্ষের লোকজনকে তৎপর থাকতে দেখা যায়। তাঁরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটকদের শুভেচ্ছা জানান।

ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক মামুনুর হাসান বলেন, পরিবারের ১১ সদস্য নিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাচ্ছেন। আশা করছেন, ভ্রমণ আনন্দদায়ক হবে।

কুমিল্লা থেকে বেড়াতে এসেছেন আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, পরিবারের পাঁচজন সদস্য নিয়ে কক্সবাজার বেড়াতে আসেন। এসে জানতে পারেন, আজ সেন্ট মার্টিনে যাওয়া যাবে। তাই দেরি না করে টিকিট সংগ্রহ করেন।

পর্যটকবাহী জাহাজ এমভি বার আউলিয়ার ব্যবস্থাপক হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ বিশ্ব পর্যটন দিবস। এই দিনে জাহাজ চলাচল শুরুর অনুমতি দেওয়ায় জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনসহ সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। সেন্ট মার্টিনে আসা জাহাজটি আজ বেলা সাড়ে তিনটায় টেকনাফের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল সাড়ে নয়টায় টেকনাফের দমদমিয়া জাহাজঘাট থেকে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। আর বেলা সাড়ে তিনটায় সেন্ট মার্টিন থেকে টেকনাফের উদ্দেশে জাহাজ রওনা হবে।’