বগুড়ায় ছাত্রলীগ করার অভিযোগে জেলা ছাত্রদলের এক নেতাকে তুলে এনে মামলার ভয় দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক উপপরিদর্শকের (এসআই) বিরুদ্ধে। ছাত্রদলের ওই নেতার নাম রুবেল হোসেন (২৫)। তিনি বগুড়া জেলা ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির সদস্য। তিনি শিবগঞ্জ উপজেলার বেলাই গ্রামের গাজিউল হকের ছেলে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে ছাত্রদল নেতাকে তুলে আনার ঘটনা ঘটে।
জেলা বিএনপি ও ছাত্রদল নেতার আত্মীয় সূত্রে জানা যায়, বগুড়া সদর থানার ওসির নাম ভাঙিয়ে উপপরিদর্শকের (এসআই) তরিকুল ইসলাম ছাত্রদল নেতা রুবেল হোসেনের পরিবারের কাছ থেকে ঘুষের এ টাকা আদায় করেন। বিষয়টি জানাজানির পর জেলা বিএনপির এক শীর্ষ নেতা থানায় গিয়ে চাপ দিলে অভিযুক্ত ওই এসআই ঘুষের টাকা ফেরত দিয়েছেন। ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না থাকায় পরে থানা-হাজত থেকে ১৫ ঘণ্টা পর আজ সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
তবে মামলার ভয় দেখিয়ে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এসআই তরিকুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রুবেলের পরিবারের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। ঘুষের টাকা ফেরত দেওয়ার কোনো ঘটনাও ঘটেনি। রুবেল হোসেনের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ করা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বাধা ও হামলার অভিযোগ আছে। এ কারণে ওসির নির্দেশে তাঁকে মঙ্গলবার রাতে শহরের জামিলনগর এলাকার বাসা থেকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে ওসির নির্দেশেই থানা হেফাজত থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বগুড়া জেলা বিএনপির সহসভাপতি আবদুল বাসেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘রুবেল হোসেন জেলা ছাত্রদলের সদস্য। তাঁর বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ করার অভিযোগ ভিত্তিহীন। জেলা ছাত্রদলের মিছিল-সমাবেশে সক্রিয় অংশগ্রহণ করলেও তাঁকে সদর থানা-পুলিশ মঙ্গলবার রাত তিনটার দিকে শহরের জামিলনগর এলাকার বাসা থেকে তুলে নিয়ে হাজতে আটকে রাখে। রুবেলের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ করার অভিযোগ আনা হয়। রুবেলের বাড়ি এবং আমার বাড়ি একই গ্রামে। এ জন্য তাঁকে খুব ভালো করেই চিনি। ছাত্রদলের পরিচয় নিশ্চিত করার পর বিনা অপরাধে তুলে নিয়ে গিয়ে থানা-হাজতে আটকে রাখার বিষয়ে সদর থানার ওসির সঙ্গে কথা বলি। যেহেতু তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই এ কারণে তাঁকে ছেড়ে দিতে বলি। কিন্তু পুলিশ তাঁকে ছেড়ে দিতে টালবাহানা শুরু করেন। একপর্যায়ে বিস্ফোরক আইনের মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে এসআই তরিকুল ইসলাম ওসির নাম করে এক লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। দর-কষাকষির পর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নেন।’
বিএনপি নেতা আবদুল বাসেদ আরও বলেন, ‘বিনা অপরাধে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে এসে ১৫ ঘণ্টা থানা হাজতে আটকে রাখা এবং ৫০ হাজার টাকা ঘুষ আদায়ের অভিযোগ পেয়ে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সদর থানায় গিয়ে এসআই তরিকুলের সঙ্গে দেখা করি। তাঁর কাছে ঘুষের টাকা ফেরত চাইতেই তিনি দৌড় দিয়ে চলে যান। পরে রুবেলের আত্মীয় সাইফুলের কাছে ৫০ হাজার টাকা ফেরত দেন এবং সন্ধ্যা ছয়টার দিকে রুবেলকে থানা–হাজত থেকে ছেড়ে দেন।’
ছাত্রদল নেতা রুবেল হোসেনের আত্মীয় সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে রুবেল হোসেনকে শহরের জামিলনগরের বাসা থেকে তুলে নিয়ে আটকে রাখা হয়। পরে ছাত্রদলের কমিটির কাগজপত্র পুলিশকে দেওয়ার পর এসআই এক লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। ওসিকে এ টাকা দিতে হবে বলেও তিনি বলেন। দর-কষাকষির পর ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নেন। জেলা বিএনপির নেতা আবদুল বাসেদকে জানানোর পর তিনি থানায় এসে ঘুষের টাকা ফেরত দিতে বলেন। অবস্থা বেগতিক বুঝে ওই এসআই অন্য কক্ষে এসে ৫০ হাজার টাকা আমার হাতে ফেরত দেন।’
বগুড়া জেলা ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘রুবেল হোসেন জেলা ছাত্রদলের সদস্য ছিলেন। তাঁকে ছাত্রলীগ সন্দেহে আটকের পর আমি ওসিকে ফোন করে তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিতও করেছি। পরে ঘুষের ৫০ হাজার টাকাসহ তাঁকে থানা হেফাজত থেকে ছেড়ে দিয়েছে বলে শুনেছি।’
জানতে চাইলে বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মঈনুদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘রুবেল হোসেনের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ করা ছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বাধা ও হামলার অভিযোগ করেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাঁদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই রুবেলকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। বিএনপি নেতা আবদুল বাসেদ ছাত্রদলের কমিটির কাগজপত্র দেখানোর পর যাচাই–বাছাই করে রুবেলকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এসআই তরিকুল ইসলাম কারও কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে থাকলে দায় তাঁর। আমার নাম ভাঙিয়ে ঘুষ নিলেও এ সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।’
বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সদর থানার এসআই তরিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ মৌখিকভাবে শুনেছি। তদন্ত করে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’