জামালপুরের বিসিক শিল্পনগরীর অভ্যন্তরীণ সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে
জামালপুরের বিসিক শিল্পনগরীর অভ্যন্তরীণ সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে

নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারে বাধা, কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত

সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের ইট ও খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে। এখন পিচঢালাইও যেনতেনভাবে করা হচ্ছে।

জামালপুরের বিসিক শিল্পনগরীর অভ্যন্তরীণ সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা বাধা দিয়েছেন। তাঁদের বাধার মুখে সড়কের পিচ ঢালাইয়ের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। নিম্ন মানের কাজের প্রতিবাদ করায় বিসিকের এক কর্মকর্তাকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকেরা লাঞ্ছিত করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। ওই কর্মকর্তার নাম মো. মনজুরুল ইসলাম। তিনি জামালপুর বিসিকের শিল্পনগর কর্মকর্তা। এ ছাড়া শিল্পনগরে চলমান নালা, সড়ক ও কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের উপপরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

বিসিক শিল্পনগর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জামালপুরসহ আট জেলার শিল্পনগরীর অভ্যন্তরীণ সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। কাজটি করছেন এম এ ইঞ্জিনিয়ারিং ও আরাফাত কনস্ট্রাকশন। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় জামালপুর বিসিক শিল্পনগরীর অভ্যন্তরের ৪ হাজার ৭৮২ বর্গকিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করছে।

গতকাল দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন শ্রমিককে সড়কে পিচ ঢালাইয়ের কাজ করছেন। সেখানে ঠিকাদারের প্রতিনিধি বা সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। তবে সেখানে শিল্পনগরীর বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী জটলা করে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁরা সড়কে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে কাজ না করার অনুরোধ জানাচ্ছেন। তবে শ্রমিকেরা তাঁদের (ব্যবসায়ী) কোনো কথা শুনছেন না। পরে ব্যবসায়ীদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

বিসিক শিল্পনগরীর মেসার্স বারাকা ফিডসের মালিক মো. ফজলুর রহমান বলেন, ‘এক যুগ পর রাস্তার কাজ চলছে, তা–ও আবার খুবই নিম্ন মানের কাজ। শুরু থেকেই নিম্নমানের কাজের প্রতিবাদ করা হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শোনেনি। সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের ইট ও খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে। এখন কার্পেটিংয়েও নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে। ধুলাবালুর ওপর চলছিল কার্পেটিং।’

ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, এর আগে শিল্পনগর কর্মকর্তা মনজুরুল নিম্নমানের কাজে বাধা দিলে শ্রমিকেরা তাঁর সঙ্গে তর্ক শুরু করেন। তাঁর কথা না শুনে কাজ চালু রাখে। তেড়ে মারতেও যায়।

শিল্পনগর কর্মকর্তা মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি অনিয়মের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছি। এ বিষয়ে আমি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব কি না, সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। তবে কাজের অনিয়মের বিষয়ে আমি ঠিকাদার ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।’

আরাফাত কনস্ট্রাকশনের মালিক মো. আরাফাত মুঠোফোনে সাংবাদিকদের বলেন, বিসিকের কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়নি। এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। বিসিকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মুঠোফোনে তাঁর কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, কাজে যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে, তাহলে শ্রমিকেরা সেটি সমাধান করবেন। আর যদি বড় ধরনের কোনো অনিয়মের অভিযোগ থাকে, তাহলে কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

বিসিক শিল্পনগরী ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক খান বলেন, নিম্নমানের কাজ হচ্ছে। গতকাল বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে পিচ ঢালাই করা হচ্ছিল। প্রতিবাদ করতে গিয়ে এক কর্মকর্তা লাঞ্ছিত হয়েছেন।