সিলেটের দক্ষিণ সুরমার নাজিরবাজারে ট্রাক ও শ্রমিক পরিবহন করা পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১৪ শ্রমিকের মরদেহ আইনি প্রক্রিয়া শেষে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের মর্গ থেকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বিনা মূল্যে মরদেহগুলো বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছেন অ্যাম্বুলেন্সের চালকেরা। লাশগুলো বিনা মূল্যে পৌঁছে দেওয়ার বিষয়ে আগেই ঘোষণা দিয়েছিল ওসমানী হাসপাতাল অ্যাম্বুলেন্স মাইক্রোবাস উপকমিটি।
আজ বুধবার বেলা দুইটা থেকে লাশগুলোর হস্তান্তর শুরু হয়। অ্যাম্বুলেন্সের চালকেরা হাসপাতাল এলাকা থেকে বেলা তিনটার দিকে মরদেহসহ স্বজনদের নিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে রওনা হন। ওসমানী হাসপাতাল অ্যাম্বুলেন্স মাইক্রোবাস উপকমিটির সহসভাপতি শরিফ আহমদ চৌধুরী বলেন, স্ট্যান্ডের পরিবহনশ্রমিকেরা নিজেদের ইচ্ছাতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বিনা মূল্যে মরদেহ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন। নিহত সব শ্রমিকই নিম্ন আয়ের। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে অধিকাংশের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে। আবার কিছু একই জেলার সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার এবং নেত্রকোনা জেলারও রয়েছেন।
শরিফ আহমদ জানান, সাধারণত এসব লাশ পরিবহন করতে সাড়ে তিন হাজার থেকে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত নিতেন চালকেরা। তবে মানবিক দিক বিবেচনা করে কোনো খরচ কিংবা টাকা ছাড়াই পরিবহন করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এই সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় সুনামগঞ্জের দিরাই মধুপুরের বাসিন্দা সাধু মিয়া। তাঁর মরদেহ পরিবহন করা অ্যাম্বুলেন্সে বসা ছিলেন তাঁর মামা লাল মিয়া। তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সের চালকেরা বিনা মূল্যে আমাদের পৌঁছে দেবেন বলে জানিয়েছেন। তাঁদের এমন কাজে নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছেন।’ অ্যাম্বুলেন্সের চালক মো. নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের কমিটি এবং শ্রমিকেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ বাড়িতে বিনা মূল্যে পৌঁছে দেওয়ার। এরই অংশ হিসেবে আমরা পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছি।’
আজ ভোরে সিলেট নগরের আম্বরখানা থেকে ঢালাইয়ের কাজ করতে একটি পিকআপ ভ্যানে করে দুলালসহ অন্তত ৩০ জন নির্মাণশ্রমিক ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজারে যাচ্ছিলেন। পথে দক্ষিণ সুরমার নাজিরবাজারে ট্রাকের সঙ্গে পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৪ জন নিহত হন। এতে আহত হয়েছেন অন্তত আরও ১০ জন।
নিহত ১৪ জন হলেন সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার মো. সিজিল মিয়া (৫৫), একলিম মিয়া (৫৫), হারিছ মিয়া (৬৫), সৌরভ মিয়া (২৭), সাজেদুর (৬০), বাদশা মিয়া (৩০), সাধু মিয়া (৫০), রশিদ মিয়া (৫০) ও মেহের (২৫); সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার শাহীন মিয়া (৪০), দুলাল মিয়া (২৬) ও আওলাদ হোসেন (৫০); হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের আমিনা বেগম (৪৫) এবং নেত্রকোনার বারহাট্টার আওলাদ মিয়া (৪০)।