সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া থেকে মা মাছ আমদানি করেন আসাদুজ্জামান। সেই মা মাছের পোনা বড় করে বিক্রি করেন তিনি।
চাকরির সুবাদে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বালুরহাটে ঘুরতে গিয়েছিলেন গাইবান্ধার শেখ আসাদুজ্জামান। সেখানে গিয়ে অ্যাকুয়ারিয়ামের রঙিন মাছ চাষ দেখেন। এরপর বাড়িতে পরীক্ষামূলক রঙিন মাছের চাষ শুরু করেন তিনি। এখন আসাদুজ্জামানের বাড়িতে সারি সারি চৌবাচ্চা। সেখানে আছে নানা রঙের মাছ। বর্তমানে তাঁর খামারে নানা জাতের দুই লাখ মাছ রয়েছে, যার মূল্য প্রায় ৪০ লাখ টাকা।
শেখ আসাদুজ্জামান ওরফে বিপ্লবের (৩৭) বাড়ি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের জিরাই গ্রামে। গাইবান্ধা শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে জিরাই গ্রাম। খামারে গিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পড়ালেখা বেশি দূর করেননি আসাদুজ্জামান।
এসএসসি পাসের পর ২০০৩ সালে ঢাকায় চাকরি নেন। চাকরির সুবাদে তিনি ২০১৩ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বালুরহাটে ঘুরতে যান। সেখানে অ্যাকুয়ারিয়ামের রঙিন মাছ চাষ দেখেন। তখন থেকে রঙিন মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ হন। চাকরির পাশাপাশি বাড়িতে পরীক্ষামূলক রঙিন মাছের চাষ শুরু করে লাভের মুখ দেখেন।
প্রতিবছর দেশে ৬০০ কোটি টাকার রঙিন মাছের চাহিদা রয়েছে। দেশে উৎপাদন করা হচ্ছে এর অর্ধেক।আসাদুজ্জামান, উদ্যোক্তা
আসাদুজ্জামান বলেন, চাকরি ছেড়ে দিয়ে ২০১৫ সালের নভেম্বর থেকে বড় আকারে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ শুরু করেন। খামারের নাম দেন ‘অ্যাকোয়া ফিস ল্যান্ড খামার’। মাত্র ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে বাড়ির আঙিনায় দেওয়া খামারে ২০-২৫ জাতের মাছ চাষ করেন। সে সময় তাঁর খামারে প্রায় ১৫ হাজার মাছ ছিল। দুই বছর পর তিনি জিরাই গ্রামে বাৎসরিক ভাড়ায় ৪৪ শতক জমি ইজারা নেন। এই জমিতে মাছের খামার স্থানান্তর করেন। ওপরে প্লাস্টিকের জাল দিয়ে ছাউনি দেন। যাতে রোদ আর ছায়া দুটোই পাওয়া যায়। এর ভেতর সিমেন্টের তৈরি ৪৫টি চৌবাচ্চা স্থাপন করেন। চৌবাচ্চায় পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা আছে।
তিরি আরও বলেন, প্রথমে সাড়ে তিন লাখ টাকার রঙিন মাছ কেনেন। খামার গড়ে তুলতে মাছ, বিদ্যুৎ, অবকাঠামোসহ মোট ১১ লাখ টাকা খরচ হয়। বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় মা মাছ আমদানি করছেন আসাদুজ্জামান। এই রঙিন মা মাছ পোনা ছাড়ছে। এই পোনা মাছ বড় করে তিনি বিক্রি করছেন। খামারে আছে অক্সিজেনব্যবস্থা।
মাছ বিক্রির জন্য তাঁকে হাটবাজারে যেতে হয় না। খামারের নামে রয়েছে ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল, গুগল বিজনেস। এসব ব্যবহার করে অনলাইনের মাধ্যমে তিনি ঘরে বসেই সারা দেশে রঙিন মাছ বিক্রি করছেন। বিকাশ ও ব্যাংক হিসাবে টাকা নিয়ে কুরিয়ারে বিশেষ ব্যবস্থায় মাছ অর্ডারদাতাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। এভাবে শতকরা ৯০ ভাগ মাছ খুচরা ও পাইকারি দামে তিনি বিক্রি করছেন।
তিনি বলেন, মাত্র ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে মাছসহ খামারে প্রায় ৫০ লাখ টাকা মূল্যের সম্পদ রয়েছে। বর্তমানে খরচ বাদে তাঁর মাসিক আয় ৫০-৬০ হাজার টাকা। এক-একটি রঙিন মাছের দাম ১৫ টাকা থেকে ৩৫ হাজার টাকা। এখন তাঁর খামারে প্রায় নানা জাতের দুই লাখ মাছ রয়েছে, যার মূল্য প্রায় ৪০ লাখ টাকা। এগুলো হচ্ছে মলি, প্লাটি, সোর্ডটেল, গাপ্পি কমেট, জাপানি বাটারফ্লাই, কইকাপ, জেবরা দানিয়া, টাইগার বার্ব, গোরামি, এনজেল থাইটার, গোল্ডফিস প্রভৃতি।
আসাদুজ্জামান বলেন, ভবিষ্যতে খামারটি আরও বড় আকারে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। প্রয়োজনীয় মূলধন ও কারিগরি সমস্যার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। প্রশিক্ষণের জন্য রঙিন মাছচাষিদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ অর্নামেন্টাল ফিস কাউন্সিল’–এর পক্ষে সরকারকে আবেদন জানানো হয়েছে।
তিনি ওই সংগঠনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক। প্রতিবছর দেশে ৬০০ কোটি টাকার রঙিন মাছের চাহিদা রয়েছে। দেশে উৎপাদন করা হচ্ছে এর অর্ধেক। ফলে বর্তমানে রঙিন মাছ আমদানি করতে হচ্ছে। সরকার সহযোগিতা করলে দেশেই উৎপাদন করা সম্ভব।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. ফয়সাল আজম বলেন, জেলায় এই প্রথম রঙিন মাছের চাষ হচ্ছে। আসাদুজ্জামানকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। চাইলে তাঁকে ঋণও দেওয়া হবে।