হাড় কাঁপানো শীতের মধ্যেই কর্মস্থলে ছুটছেন খেটে-খাওয়া মানুষ। আজ সকালে চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গা সড়কের ঘোড়ামারা এলাকায়
হাড় কাঁপানো শীতের মধ্যেই কর্মস্থলে ছুটছেন খেটে-খাওয়া মানুষ। আজ সকালে চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গা সড়কের ঘোড়ামারা এলাকায়

সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়

‘অ্যারাম জাড়ের মদ্দি ঘরেত্তি বেইর হতি মন চাইনা’

আবারও শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়েছে চুয়াডাঙ্গা। এক দিনের ব্যবধানে জেলাটির তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন শীতার্ত মানুষ। এর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে কর্মজীবী মানুষের ওপর। হাড়কাঁপানো শীত ও কুয়াশার মধ্যেই তাদের কর্মস্থলে ছুটতে হচ্ছে। আলুখেত ও ধানের বীজতলা রক্ষায় বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে জেলার কৃষি বিভাগে।

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এ নিয়ে চলতি মৌসুমে অন্তত চার দিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে জেলাটিতে। গতকাল বুধবার একই সময়ে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ এক দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমেছে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, মাঝে কিছুদিন বিরতি দিয়ে জেলার ওপর দিয়ে আজ থেকে আবারও শৈত্যপ্রবাহ বইতে শুরু করেছে। এ অবস্থা আরও কয়েক দিন চলতে পারে।

গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৫ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করেছে। এ সময় তীব্র শীত অনুভূত হয়।  

তীব্র ঠান্ডায় ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না, বললেন চুয়াডাঙ্গা সরদারপাড়ার বাসিন্দা ও মৎস্যশ্রমিক আশিক সরদার। তিনি বলেন, ‘গ্যালো কদিন য্যারাম জাড় লাগজে, মাচ ধরতি খুবই কষ্ট হচ্চে। প্যাটে খিদে তাই জাড়ের মদ্দিই পুকুরি লাবতি হচ্চে।’ একই মহল্লার ভ্যানচালক টোকেন আলী বলেন, ‘অ্যারাম জাড়ের মদ্দি ঘরেত্তি বেইর হতি মন চাইনা। কী করি? এক দিন বের না হলি তো পরের দিন ভাত জোটপেনানে।’

এদিকে শীতের কারণে কয়েক দিন ধরেই জেলার হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বেসরকারি হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের ভিড় বেড়েছে। বিশেষ করে শিশু, ডায়রিয়া ও মেডিসিন বিভাগে রোগীদের উপচে পড়া ভিড়ের কারণে চিকিৎসক-নার্সদের হিমশিম অবস্থা।

জেলার সদর হাসপাতালের শিশু বিভাগের পরামর্শক মাহবুবুর রহমান বলেন, শীতের কারণে হাসপাতালে দুই ধরনের শিশু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ঠান্ডাজনিত রোগ ও রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া। প্রতিদিন বহির্বিভাগে শিশু রোগীর চাপ বেড়ে যাচ্ছে। অন্তবিভাগে শিশু ওয়ার্ডে গড়ে ৬০ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। এ ছাড়া ডায়রিয়া ওয়ার্ডেও ৫০ থেকে ৬০টি করে রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে।

অন্যদিকে গত কয়েক দিনের ঘন কুয়াশার কারণে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আলুখেত ও বোরো ধানের বীজতলা রক্ষায় বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে। অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ধানের বীজতলা বিকেলে সেচ দিয়ে পরের দিন সকালে পানি বের করে দিতে হবে। এ ছাড়া সকালে চারার ওপর থেকে শিশির সরিয়ে দেওয়া, সম্ভব হলে রাতের বেলা ঢেকে দিতে হবে। বীজতলা চাল হলে জিপসাম ও ইউরিয়া সার দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আলুখেতে আগামধসা ও নাবিধসা ছত্রাক যাতে না লাগে, সে জন্য ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে বলা হয়েছে। সার্বিক বিষয় দেখভাল করতে মাঠপর্যায়ে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।