রোজার আগে সিলেট নগরের টুকেরবাজার এলাকায় বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে অসচ্ছল মানুষের কাছে ১০ টাকায় হাজার টাকার বাজার তুলে দেওয়া হয়েছে
রোজার আগে সিলেট নগরের টুকেরবাজার এলাকায় বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে অসচ্ছল মানুষের কাছে ১০ টাকায় হাজার টাকার বাজার তুলে দেওয়া হয়েছে

সিলেটে বিদ্যানন্দের ১০ টাকায় দেড় হাজার টাকার বাজার

সিলেট নগরের টুকেরবাজার এলাকায় নিম্ন আয়ের ১৬০ জন মানুষকে ১০ টাকা প্রতীকী মূল্যে প্রায় দেড় হাজার টাকার পণ্য দিয়েছে বেসরকারি সংস্থা বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। সংস্থাটি এ কার্যক্রমের নাম দিয়েছে ‘১০ টাকায় রোজার বাজার’। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে টুকেরবাজারের একটি কমিউনিটি সেন্টারে হওয়া বিদ্যানন্দের এ বাজার চলে বেলা একটা পর্যন্ত।

প্রতীকী মূল্য ১০ টাকায় অনেকগুলো পণ্য কিনতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন সুবিধা গ্রহীতারা। তাঁরা বলেছেন, ১০ টাকায় ‘মেলা জিনিস’ (অনেক জিনিস) কিনেছেন তাঁরা। এতে তাঁরা খুশি।

আজ সকালে কমিউনিটি সেন্টারটিতে গিয়ে দেখা গেছে, বাজার করতে সেখানে ভিড় জমিয়েছেন অসচ্ছল নারী ও পুরুষেরা। বাজারটি সাজানো হয়েছে সুপারশপের আদলে। প্রবেশমুখে প্রত্যেককে আগে সরবরাহ করা টোকেন রেখে দেওয়া হচ্ছে প্রতীকী ১০ টাকার খুচরো। পরে সুপারশপে পণ্য রাখার ঠেলাগাড়ি নিয়ে সারি ধরে প্রতীকী টাকায় তাঁরা চাল, ডাল, ছোলা, আটা, ডিম, সুজি, চিনি, নুডলস, মাছ, মুরগি, ভোজ্যতেল, খাতা-কলম ও টি-শার্ট কিনছিলেন। এগুলোর প্রতিটির ইউনিট হিসেবে মূল্য ধরা হয়েছে ১ টাকা করে। এর মধ্যে ১ টাকায় তিন কেজি চাল, ১ টাকায় এক কেজি ডাল, ১ টাকায় এক ডজন ডিম, ১ টাকায় একটি পাঙাশ মাছ, ১ টাকায় এক লিটার সয়াবিন তেল, ১ টাকায় একটি মুরগি, ১ টাকায় এক কেজি আটা, ১ টাকায় এক কেজি ছোলা, ১ টাকায় এক প্যাকেট ফ্যামিলি নুডলস, ১ টাকায় খাতা-কলম এবং ১ টাকায় টি-শার্ট। ডালের মধ্যে রয়েছে মসুর ডাল, চানার ডাল ও অ্যাংকর ডাল।

শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সিলেটের টুকেরবাজারের একটি কমিউনিটি সেন্টারে হওয়া বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের এ বাজার চলে বেলা একটা পর্যন্ত

সিলেটের কান্দিগাঁও গ্রামের সামছুন নাহার (৮৫) নামের এক বৃদ্ধা সারি ধরে কিনছিলেন রোজার বাজার। বয়স্ক হওয়ায় বাজার করতে সহায়তা করছিলেন সংস্থাটির একজন স্বেচ্ছাসেবক। সামছুন নাহার বলেন, ‘১০ ট্যাকায় মেলা জিনিস কিনছি, ভালো লাগছে। কিন্তুক যেগুইন কিনছি ইগুইন কত ট্যাকার ওইবো, হিখান কইতে পারতাম না (বাজারমূল্য বলতে পারবেন না)।’ এরপর ধারণা করে তিনি বলেন, ‘ওইব দেড় দুই হাজার ট্যাকার।’

ঘোপাল গ্রামের লাইলি (৫৫) বলেন, তাঁর পরিবারে চার মেয়ে। স্বামী মারা গেছেন প্রায় পাঁচ বছর আগে। এখন পরিবারের দায়িত্ব তাঁর কাঁধেই। মানুষের ঘরে কাজ করেই তাঁর সংসার চলে। সামনে রমজানের জন্য বাজার নিয়ে চিন্তিত ছিলেন তিনি। এখন কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলেছে বাজারগুলো পেয়ে।

বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবক মো. রানা আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, রমজানে অসহায় মানুষজনকে কিছুটা স্বস্তি দিতে সংস্থাটির পক্ষ থেকে এমন আয়োজন করা হয়েছে। মূলত দুস্থদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্দেশ্যে বছরজুড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের বাজারের আয়োজন করা হয়। সংস্থার স্বেচ্ছাসেবীরা এ কার্যক্রমের জন্য আগেই অসহায় ও নিম্ন আয়ের অসচ্ছল পরিবারের ১৬০ জন নারী-পুরুষকে নির্বাচিত করে টোকেন দিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রতীকী ১০ টাকায় যে বাজারগুলো কিনেছেন, সেগুলোর বর্তমান বাজারমূল্য ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। সুবিধাবঞ্চিতরা যাতে কোনোভাবেই এটিকে দান মনে না করতে পারেন, এ জন্য নামমাত্র মূল্যে এমন আয়োজন করা হয়েছে।