রংপুর নগরের এনজিও ফোরাম মিলনায়তনে ‘রংপুর বিভাগ বৈষম্য নিরসন আন্দোলন’–এর ব্যানারে আজ মঙ্গলবার কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে
রংপুর নগরের এনজিও ফোরাম মিলনায়তনে ‘রংপুর বিভাগ বৈষম্য নিরসন আন্দোলন’–এর ব্যানারে আজ মঙ্গলবার কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে

কর্মশালায় বক্তারা

রংপুর বিভাগের উন্নয়নে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে

রংপুরে এক কর্মশালায় বক্তারা বলেছেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছরে মোট ৫৪টি বাজেটে রংপুর অঞ্চলের মানুষ আঞ্চলিক বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। রংপুর বিভাগে দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে বেশি। ভূমিহীন কৃষকের সংখ্যা বেশি। গ্রামীণ অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য ও কর্মসংস্থানের সুবিধা অন্য জেলারগুলোর তুলনায় কম। এ থেকে উত্তরণে রংপুর বিভাগের জন্য এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে রংপুর বিভাগের বৈষম্য নিরসনে সর্বদলীয় পরিষদ গঠন করতে হবে।

আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে রংপুর নগরের এনজিও ফোরাম মিলনায়তনে ‘রংপুর বিভাগ বৈষম্য নিরসন আন্দোলন’–এর ব্যানারে এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় বিএনপির রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব (দুলু), বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শওকাত আলী, রংপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মজিদ আলী, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল, বিএনপির পল্লী উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক ফরহাদ হোসেন, রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।

কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রাধ্যক্ষ আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি তাঁর প্রবন্ধে রংপুর বিভাগের উন্নয়নের পথে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দারিদ্র্য, শিল্পায়নের বন্ধ্যত্ব, বাজেট বরাদ্দে নজিরবিহীন বৈষম্যকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।

দারিদ্র্যের প্রসঙ্গ তুলে ধরে আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, অর্থনৈতিক সমীক্ষা–২০২৪ অনুযায়ী, দেশে জাতীয় দারিদ্র্যের হার বর্তমানে ১৮ দশমিক ৭। রংপুরের দারিদ্র্যের হার ২৪ দশমিক ৮, যা জাতীয় হারের চেয়ে বেশি ও হতাশাজনক। বন্যা, খরা, নদীভাঙনসহ প্রাকৃতিক দুযোগে লাখো মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে আসে। কিন্তু তিস্তা অববাহিকার লাখো মানুষের জীবন বদল নিয়ে তিস্তা নদীর সুরক্ষা নিয়ে কোনো কর্মসূচি নেই।

শিল্পায়নের ক্ষেত্রে আবদুল্লাহ আল মামুন অবকাঠামোগত দুর্বলতা, বিনিয়োগে উদ্যোক্তাদের অনীহা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, সরকারি প্রণোদনার অভাব, অনুন্নত যোগাযোগব্যবস্থার কারণে পণ্য পরিবহনের ঝুঁকি ও অত্যধিক ব্যয় এবং বাণিজ্যনীতিতে অনগ্রসর অঞ্চলের জন্য বিশেষ প্রণোদনার অনুপস্থিতিকে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, উন্নয়ন বাজেটে আঞ্চলিক বৈষম্য, বিশেষ অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠায় বৈষম্য ও অনীহা, শিক্ষাক্ষেত্রে অবজ্ঞামূলক বরাদ্দ, রংপুর মহানগরবাসীর প্রতি অবজ্ঞার বরাদ্দ, স্বাস্থ্যসেবা খাতে বঞ্চনার ধারাবাহিকতা, কৃষি উন্নয়নে স্বল্প বরাদ্দ থাকায় রংপুর বিভাগ পিছিয়ে পড়েছে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে আসাদুল হাবিব বলেন, চরম দারিদ্র্যে রংপুরের মানুষ অবস্থান করছেন। একটি এলাকাকে এগিয়ে নিতে হলে রাজনীতিবিদদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। রংপুরে নেতৃত্বের দুর্বলতা ছিল, যাঁর কারণে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। ভবিষ্যতে বিএনপি ক্ষমতায় আসার সুযোগ পেলে পিছিয়ে পড়া রংপুরকে এগিয়ে নিতে কাজ করবে।

যোগাযোগের ক্ষেত্রে রংপুর বিভাগ পিছিয়ে আছে উল্লেখ করে বিএনপির পল্লী উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক ফরহাদ হোসেন আজাদ বলেন, প্রত্যন্ত এলাকার রাস্তাঘাটগুলো কাঁচা। বিগত সময়ে যেগুলো করা হয়েছে, সেগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দিনাজপুরের চাল ও পঞ্চগড়ের চা নিয়ে বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা করতে হবে।

অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল জানান, রংপুরের কাউনিয়ায় টেপা মধুপুরে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করতে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী জেলা প্রশাসক সম্মেলনে তিনি রংপুরে তিস্তা নদীর ভাঙন প্রতিরোধে প্রস্তাবনা তুলে ধরবেন।

এতে আরও বক্তব্য দেন রংপুর বিভাগ বৈষম্য নিরসনের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান, সদস্যসচিব আবুল আলা মো. রিসালাত, মুখপাত্র রিপন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী একরামুল হক, আবিদ হাসনাত, মারুফ হাসান, সাদমান সাকিব প্রমুখ।