নেত্রকোনার ৫টি আসনের ২টিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা, ১টিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান জয়ী

আহমদ হোসেন, মো. আশরাফ আলী খান ও সাজ্জাদুল হাসান
ছবি: সংগৃহীত

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেত্রকোনার পাঁচটি আসনে আওয়ামী লীগের চার প্রার্থী ও এক স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। জয়ী প্রার্থীদের মধ্যে দুজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাঁদের মধ্যে একজন তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া জয়ী একজন প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।

দুই বীর মুক্তিযোদ্ধা হলেন নেত্রকোনা-২ (সদর ও বারহাট্টা) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান এবং নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলা) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী আহমদ হোসেন। জয়ী বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হলেন নেত্রকোনা-৪ (মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরী) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাজ্জাদুল হাসান। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও গণপরিষদের সাবেক সদস্য প্রয়াত চিকিৎসক আখলাকুল হোসাইনের ছেলে।

নেত্রকোনা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, এবারের নির্বাচনে নেত্রকোনার পাঁচটি আসনে সাত স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ বিভিন্ন দলের মোট ২৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাঁদের মধ্যে নেত্রকোনা-৩ (কেন্দুয়া ও আটপাড়া) আসন ছাড়া অন্যগুলোতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। ওই আসনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে খ্যাত বর্তমান সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিলকে ২ হাজার ২৫৩ ভোটে পরাজিত করেন সাবেক সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার।

নেত্রকোনা-২ (সদর ও বারহাট্টা) আসনে জয়ী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আশরাফ আলী খান মুক্তিযুদ্ধের সময় ১১ নম্বর সেক্টরে টাইগার কোম্পানির প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে নেত্রকোনার বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ করেন। ষাটের দশকে মাধ্যমিক স্কুলে লেখাপড়া করার সময় থেকে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে হাতেখড়ি নেন। উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের সময় তিনি জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। জেলা আওয়ামী লীগের টানা দুবারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশরাফ আলী খান বর্তমান কার্যকরী কমিটির ১ নম্বর সদস্য। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রথমবার দলীয় মনোনয়ন পেয়ে বিএনপির প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ উদ্দিন খানের চেয়ে ৮৬ হাজার ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হন। এরপর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন বঞ্চিত হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও দলের মনোনয়ন পেয়ে তিনি বিএনপির প্রার্থী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. আনোয়ারুল হকের চেয়ে ২ লাখ ৫৩ হাজার ৪৮৭ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হন। তখন তাঁকে প্রথমে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হয়। পরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। স্থানীয়ভাবে তিনি একজন সজ্জন ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে সমাদৃত। তাঁর বাবা প্রয়াত নুরুল ইসলাম খান (এনআই খান) মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও নেত্রকোনা পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন।

আশরাফ আলী খানের বিজয়ের বিষয়ে তাঁর বাল্যবন্ধু বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রাবন্ধিক হায়দার জাহান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আশরাফ আলী ছোটবেলা থেকেই একজন অসাম্প্রদায়িক, নির্ভেজাল ও নির্মোহ মানুষ। যা প্রতিশ্রুতি দেন, তা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেন। সংসদ সদস্য হওয়ার পর থেকে প্রয়োজনের সময়ে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করেছেন। এসব বিষয় ভোটাররা মনে রেখে তাঁকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছেন।

তৃণমূল পর্যায়ে ছাত্রলীগের মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতি শুরু করা আহমদ হোসেন পর্যায়ক্রমে পূর্বধলার বিশকাকুনী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল ছাত্রলীগের সভাপতি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। পরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে তিনবার সহসম্পাদক, চলতি মেয়াদসহ পাঁচবার সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। এবার তাঁকে প্রথম দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। তিনি ৭৯ হাজার ৬৪৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মাহজারুল ইসলাম পান ২৭ হাজার ২১৪ ভোট।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব ও বর্তমান সংসদ সদস্য সাজ্জাদুল হাসানের বাবা প্রয়াত চিকিৎসক আখলাকুল হোসাইন গণপরিষদ সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সহচর আখলাকুল মুক্তিযুদ্ধে মহেশখলা ক্যাম্পের ইনচার্জ ও ময়মনসিংহ ভাটি অঞ্চল নিয়ে গঠিত নর্থ সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। গত বছরের ১১ জুলাই নেত্রকোনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেবেকা মমিনের মৃত্যুতে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সাজ্জাদুল হাসান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এবারের নির্বাচনেও তিনি দলীয় মনোনয়ন পেয়ে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৬৮ ভোট পান। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লাঙ্গলের মো. লিয়াকত আলী খান পেয়েছেন ৫ হাজার ৭৫৯ ভোট।