বেতন বৃদ্ধিসহ ছয় দফা দাবিতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নগর ভবনের সামনে ময়লা–আবর্জনা ফেলে বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কর্মকর্তাদের গাড়িও অবরুদ্ধ করেন। মঙ্গলবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর থেকে ছয় দফা দাবিতে নগর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন শুরু করেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। বেলা তিনটার দিকে তাঁরা নগর ভবনের সামনে অবস্থান নেন। ময়লা–আবর্জনা ফেলে বিক্ষোভ করতে থাকেন। নগর ভবনের সামনে কর্মকর্তাদের গাড়ি অবরুদ্ধ করে রাখেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা।
পরে নগর ভবন থেকে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী নেমে এসে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘মাসিক সভার সিদ্ধান্তে আপনাদের সবার বেতন বাড়ানো হয়েছে। আপনাদের বেতন বাড়িয়ে আট হাজার টাকা করা হয়েছে। আপনাদের জন্য আবাসনব্যবস্থা করা হয়েছে। আপনারা কোথাও ভাড়া থাকলেও পাঁচ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে থাকতে হতো। আপনাদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য সিটি করপোরেশন কাজ করছে।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে মেয়র বলেন, ‘আপনারা আপনাদের দাবিদাওয়ার বিষয় উত্থাপন করতেই পারেন। কিন্তু এটার সঠিক নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি রয়েছে। বেতন–ভাতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের বিষয়টি আপনারা অবগত হওয়ার পরও সিটি করপোরেশনের ভেতরে ময়লা–আবর্জনা ফেলে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা, এটা কী ধরনের আচরণ।’
এ সময় পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা তাঁদের ছয় দফা দাবি দ্রুত বাস্তবায়নে মেয়রের প্রতি আহ্বান জানান। পরে মেয়র নগর ভবন ছেড়ে চলে গেলে আন্দোলনরত পরিচ্ছন্নতাকর্মীরাও চলে যান।
পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সংগঠন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক কিশোর লাল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের দৈনিক সর্বনিম্ন মজুরি ১৩৫ টাকা। এই টাকায় সংসার চলে না। তাই ন্যূনতম দৈনিক হাজিরা ৬৫০ টাকা ও সিটি করপোরেশনের ট্রাকশ্রমিকদের ৭৫০ টাকাসহ ছয় দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন তাঁরা।
সিটি করপোরেশনের ভেতর ময়লা–আবর্জনা ফেলার বিষয়ে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কিশোর লাল বলেন, ‘কিছু উচ্ছৃঙ্খল যুবক এই কাজ করেছেন, এটার দায় আমরা নেব না।’
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বেতন–ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে নগর ভবনের সামনে ময়লা–আবর্জনা ফেলে বিক্ষোভ করেছেন। তবে মেয়রের গাড়িতে হামলা ও ময়লা ফেলার কোনো ঘটনা ঘটেনি।
এ বিষয়ে মেয়র আইভীর একান্ত সচিব আবুল হোসেন জানান, সিটি করপোরেশনের তৃতীয় মাসিক সভায় ১ হাজার ১৫৫ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও আরও অন্যান্য অস্থায়ী কর্মচারীর বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেখানে একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর বেতন আট হাজার টাকা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কাজ চলছে।
আবুল হোসেন বলেন, ‘আমাদের ১ হাজার ১৫৫ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী রয়েছেন। তাঁরা গুটিকয়েক পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে দিয়ে মেয়রের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করার জন্য তাঁরা এই কাজ করছেন। তাঁরা কারও না কারও ইন্ধনে এই কাজ করছেন।’
এর আগে গত সোমবার বিকেলে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ছয় দফা দাবিতে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের বিক্ষোভ–সমাবেশ করেন। তাঁদের দাবিগুলো হলো শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের নিয়োগপত্র প্রদান ও চাকরি স্থায়ীকরণ, ন্যূনতম দৈনিক হাজিরা ৬৫০ টাকা ও সিটি করপোরেশনের ট্রাকশ্রমিকদের বেতন ৭৫০ টাকা করা, বেতনের সমপরিমাণ উৎসব ভাতা প্রদান, প্রতি ওয়ার্ডে দুজন করে ডোম নিয়োগ, বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের আবাসনের ব্যবস্থা করা, পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা দুর্ঘটনায় নিহত হলে পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ ও স্বাভাবিক মৃত্যুতে কাস্ট বা দাফনের জন্য ৫০ হাজার টাকা প্রদান।