বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী হলের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের আটজন আহত হয়েছেন।
সংঘর্ষে আহত আটজনকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ কেয়ার সেন্টারে পাঠানো হয়। ওই সেন্টারের উপপ্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. সাদিকুল ইসলাম খান বলেন, আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজনের মাথায় সেলাই দেওয়া হয়েছে, একজনের কাঁধের এক্স–রে করাতে শহরের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে এবং বাকি ছয়জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেগম রোকেয়া হলের দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, কিছুদিন ধরেই বেগম রোকেয়া হল ও শেখ রোজী জামাল হলের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে ভেতরে ভেতরে অনেক ঝামেলা চলছিল। গতকাল হলে সীমানা নির্ধারণ সমস্যার সমাধানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টার সঙ্গে দুই হলের প্রাধ্যক্ষ, দুই হল শাখা ছাত্রলীগের নেত্রী এবং ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ একটি আলোচনা সভা ডাকা হয়।
ওই সভা হওয়ার আগেই দুই হলের সীমানায় অবস্থিত ক্যাফেটেরিয়ায় ইফতারির দোকান বসানোকে কেন্দ্র করে দুই হলের ছাত্রলীগের নেত্রীদের মধ্যে কথা–কাটাকাটির সূত্রপাত হয়। একপর্যায়ে হাতাহাতিও হয়। পরে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত হন। দুই পক্ষের মধ্যে কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে সাধারণ সম্পাদক দলের এক নেতা সভাপতি পক্ষের একজনকে হলের ভেতরেই মারধর শুরু করেন। পরে তাঁদের হলের বাইরে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়।
একাধিক প্রত৵ক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, ছাত্রী হলের ভেতরে বিশৃঙ্খলা এড়াতে ছাত্রলীগ কর্মীদের হলের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পরে সভাপতির অনুসারীরা একটি ছাত্র হল থেকে এসে সাধারণ সম্পাদক পক্ষের আরেকজনকে মারধর শুরু করেন। পরে বিভিন্ন হল থেকে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পক্ষের নেতা–কর্মীরা এসে ভিড় জমান বেগম রোকেয়া হলের সামনের সড়কে। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি চেষ্টা করতে থাকে। একপর্যায়ে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত করে রোকেয়া হলের সামনে থেকে দুই পক্ষের নেতা–কর্মীদের সরিয়ে নেওয়া হয়। পরে আবার প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে এক পক্ষ আরেক পক্ষের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।
সরেজমিন দেখা যায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ঘটনাস্থলে (আবদুল জব্বার মোড়) এলেও কোনো ব্যবস্থা না নিয়েই ফিরে যায়। পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ফিরে যাওয়ার পর পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে ওঠে। ইফতারের আগ পর্যন্ত দুই দলের মধ্যে দফায় দফায় চলতে থাকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ। তবে ইফতারের পরে আর কোনো সহিংস ঘটনা ঘটেনি।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন বলেন, ‘সংঘর্ষের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। তবে সেখানে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের মতো পরিবেশ তখনো ছিলো না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রীদের দুই হলের সীমানা নির্ধারণ সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করছিলাম আমরা। এর মধ্যে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মীর মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। আমরা হলের ভেতর থেকে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছিলাম। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সব হলের ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। আমরা কোতোয়ালি থানা পুলিশের সহায়তায় সমস্যা সমাধানে কাজ করছি।’
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার তায়েফুর রহমান রিয়াদ বলেন, ‘একটি হল যখন তৈরি করা হয় তখন তার নির্দিষ্ট নকশা থাকে। নকশা না থাকলেও সেটি নির্ধারণ করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রশাসন ব্যর্থ হওয়ায় সেটি আমরা সমাধানের চেষ্টা করি। কিন্তু নিজেদের ভুল–বোঝাবুঝির কারণে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। অনেক চেষ্টার পর এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে।’
শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মেহেদী হাসান বলেন, নেতা-কর্মীদের মধ্যে ভুল–বোঝাবুঝির কারণে একটি উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনাটির বিষয়ে আমি অবগত আছি। প্রক্টর এবং ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টার সাথে কথা বলে নিয়মানুযায়ী সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’