'শতবর্ষী ভবনটি রক্ষা করুন'

সিলেটের আবু সিনা ছাত্রাবাস সংরক্ষণের বিষয়ে মতবিনিময় সভায় বক্তারা। গতকাল নগরের কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সম্মেলন কেন্দ্রে। ছবি: প্রথম আলো
সিলেটের আবু সিনা ছাত্রাবাস সংরক্ষণের বিষয়ে মতবিনিময় সভায় বক্তারা। গতকাল নগরের কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সম্মেলন কেন্দ্রে।  ছবি: প্রথম আলো

‘সিলেটের আবু সিনা ছাত্রাবাস নামের শতবর্ষী ভবনটি শুধু সিলেটের আদি-ঐতিহ্যের কাঠামোর ঐতিহাসিক স্থাপনা নয়, এটি তৎকালীন বাংলা বলতে ভারতের আসাম ও পশ্চিমবঙ্গেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এই হিসেবে আবু সিনা ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহৃত ভবনটি বাংলার ঐতিহ্য। ইতিহাস দুই রকমের হয়। একটি বইয়ে পড়ে, আরেকটি চোখে দেখে। আমরা এই ভবনটি রক্ষার মধ্য দিয়ে চোখে দেখার ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই। এ জন্য ভবনটি সংরক্ষণ করার আহ্বান আমাদের।’

গতকাল রোববার বিকেলে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সিলেটের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষকেরা। ‘সিলেটের ঐতিহ্য রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ নাগরিক সমাজ’ আয়োজিত মতবিনিময় সভায় ২০১৫ সালে আবু সিনা ছাত্রাবাসের শতবর্ষী ভবন নিয়ে গবেষণাপত্রভিত্তিক একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও নাটোরে সংরক্ষিত ঐতিহাসিক স্থাপনার সঙ্গে সিলেটের শতবর্ষী ভবনের ‘স্থাপত্য চরিত্র’ অভিন্ন উল্লেখ করে বলা হয়, বাংলার ঐতিহ্য হিসেবে সিলেটের প্রথম কোনো ঐতিহাসিক স্থাপনা। এই স্থাপনা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্যের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা একটি গবেষণাগার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এই ভবন রক্ষা করে বিভাগীয় জাদুঘর প্রতিষ্ঠা একটি যৌক্তিক দাবি। এর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাও একাত্ম।

সিলেট নগরের কেন্দ্রস্থলের চৌহাট্টা এলাকায় শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল। এটির দেয়াল ঘেঁষে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের আবু সিনা ছাত্রাবাস। ছাত্রাবাসের জায়গায় আটতলাবিশিষ্ট ২৫০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণে ছাত্রাবাসটি ভাঙার কাজ শুরু করেছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। ভবনটি স্থাপনের সময়কাল চিহ্নিত না থাকায় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এ বিষয়ে অবহিত ছিল না। পরবর্তী সময়ে ‘সেভ দ্য হেরিটেজ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আবু সিনা ছাত্রাবাসের পুরোনো ভবনে ১৮৭৬ সালে প্রকাশিত সিলেটের প্রথম সংবাদপত্র শ্রীহট্ট প্রকাশ-এর ছাপাখানা থাকার বিষয়টি বিভিন্ন ঐতিহাসিক তথ্যের মাধ্যমে নিশ্চিত করলে ভবন রক্ষার দাবিতে সোচ্চার হন নাগরিকেরা।

গতকাল সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন ভবন রক্ষার দাবির আন্দোলনে একাত্ম ভাষাসৈনিক মতিন উদ্দীন জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ও সিলেট বিভাগীয় জাদুঘর প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবিত কমিটির সদস্য মোস্তফা শাহজামান চৌধুরী। পরে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় স্থাপত্য বিভাগে শিক্ষকদের গবেষণাপত্রভিত্তিক তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কৌশিক সাহা। প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক স্থাপনার দিক দিয়ে ভবনটির স্থাপত্যমূল্য, সুরক্ষা ও বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ মতামত দেন, লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষক ও স্থপতি রাজন দাশ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও স্থপতি শুভজিৎ চৌধুরী। মতবিনিময় সভায় গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন স্থাপতি ও শতবর্ষী ভবন রক্ষার আন্দোলনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

সিলেটের প্রবীণ বাম রাজনীতিবিদ গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি আরশ আলীর সভাপতিত্বে সিপিবির সাবেক সভাপতি বেদানন্দ ভট্টাচার্য, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম, জাসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক জাকির আহমদ, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সভাপতি মিশফাক আহমদ চৌধুরী, তথ্যচিত্র নির্মাতা নিরঞ্জন দে, নাগরিক মৈত্রীর আহ্বায়ক সমরবিজয় সী শেখর, বাসদের আহ্বায়ক উজ্জ্বল রায়, সেভ দ্য হেরটিজের প্রধান সমন্বয়ক আবদুল হাই আল হাদী প্রমুখ মতবিনিময়ে অংশ নেন।

মতবিনিময়ে বলা হয়, সিলেটের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী আবু সিনা ছাত্রাবাস ভবন। প্রায় দেড় শ বছর আগে থেকে প্রথম অনেক কিছুর সাক্ষী এই ভবন। এটি সংরক্ষণের মধ্য দিয়ে ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে লালন করা হবে। তাই শতবর্ষী ভবন রক্ষায় চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১১ এপ্রিল ঢাকায় একটি বড় পরিসরে সংবাদ সম্মেলন করে কেন্দ্রীয়ভাবে বিষয়টি তুলে ধরার সিদ্ধান্ত হয়।