ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সুপরিচিত মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্যটির নাম বিজয়-৭১। এটি তৈরি করেছেন ভাস্কর শ্যামল চৌধুরী। তাঁরই হাতেগড়া আরেকটি সুনিপুণ দৃষ্টিনন্দন স্তম্ভ ‘বিমূর্ত মুক্তিযুদ্ধ’। দেশ মুক্তির ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সম্মুখে গড়ে তোলা হয়েছে এটি। স্থাপনাটিতে ’৫২ থেকে ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ সময় পর্যন্ত সংঘটিত বেশ কিছু ঐতিহাসিক ঘটনা বিভিন্ন প্রতীকের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রবেশের সময় সবার আগে চোখে পড়বে এই স্থাপনা। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে স্থাপনাটির উদ্বোধন করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক এবং কলেজের সীমানার মধ্যবর্তী স্থানে দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাসের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা স্থাপনাটি। পুরো স্থাপনা তিন অংশে বিভক্ত। প্রধান অংশ ২৬ ফুট ব্যাসের একটি বৃত্তের ওপর অবস্থিত। এটি ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসকে নির্দেশ করে। এর ঠিক ওপরেই ২১ ফুট ব্যাসের আরেকটি বৃত্ত বায়ান্নর ভাষা অন্দোলনের ২১ ফেব্রুয়ারির নির্দেশক। আর সবার ওপরের ১১ ফুট ব্যাসের বৃত্তটি একটি ৭ ফুট উচ্চতার হাতের ওপর অবস্থিত। তৃতীয় এই বৃত্ত ঐতিহাসিক ১১ দফাকে নির্দেশ করে এবং হাতটি বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ও একই সঙ্গে স্বাধীনতার ৭ বীরশ্রেষ্ঠের প্রতীকী নিদর্শন।
>বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
ইতিহাসের বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে স্থাপনাটির রয়েছে তিনটি প্রধান অংশ
প্রতিটি অংশের ভিন্ন ভিন্ন খণ্ড ইতিহাসের বিভিন্ন দিক নির্দেশ করে
স্থাপনাটির একেবারে ওপরের অংশে রয়েছে সাতটি ঊর্ধ্বমুখী তীর্যক অংশ এবং একটি চাকা। যেখানে ঊর্ধ্বমুখী ৬টি তীর্যক স্বাধীনতার মুক্তির সনদ ৬ দফা এবং ১৬ ফুট উচ্চতার সপ্তম তীর্যকটি ১৬ ডিসেম্বরের প্রতীকী নির্দেশক। আর চাকাটি বাঙালি জাতির সামনের দিকে চলার অঙ্গীকার এবং এর ভেতরে অবস্থিত লাল বৃত্তের মধ্যে মানচিত্রটি মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের পতাকা নির্দেশ করে। পাশেই উড্ডয়মান চারটি সাদা পায়রা সংবিধানের মূল চার স্তম্ভের প্রতীকী নির্দেশক।
স্মারকটির দ্বিতীয় অংশে রয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি এবং মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ প্রতিকৃতি। যেন তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে দেশের ইতিহাসকে জানাতে তরুণ প্রজন্মকে হাস্যোজ্জ্বল ভঙ্গিতে আহ্বান জানাচ্ছেন।
স্থাপনাটির তৃতীয় ও শেষ অংশে রয়েছে দুটি বেষ্টনী। প্রথম বেষ্টনীতে পুরো স্তম্ভটি ৭১ ফুট সমবাহু ত্রিভুজের মতো তিন বাহুর মধ্যে আবদ্ধ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে নির্দেশ করে। পরের, অর্থাৎ বাইরের দিকের বেষ্টনীতে রয়েছে ৩ ফুট দৈর্ঘ্যের ৯০টি গোলাকার খুঁটি। এর মোট দৈর্ঘ্য ২৭০ ফুট, যা রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের ২৭০ দিনকে (৯ মাস) নির্দেশ করে। গোলাকার খুঁটির উপরিভাগের সুচারু অংশ (বেয়নেট আকৃতি) মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত বেয়নেটের প্রতীকী নির্দেশক।