'বঞ্চনার' অবসান হয়নি

গাজীপুর নগরের ৫২ নম্বর ওয়ার্ডের আন্দারোল এলাকার সড়ক এমনই বেহাল। প্রথম আলো
গাজীপুর নগরের ৫২ নম্বর ওয়ার্ডের আন্দারোল এলাকার সড়ক এমনই বেহাল।  প্রথম আলো

আন্দারোল, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত গ্রাম। এখন চারদিকে ধানখেত। বর্ষা মৌসুমে এসব জমিতে পানি থইথই করে। ছায়াসুনিবিড় গ্রামটি পড়েছে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫২ নম্বর ওয়ার্ডে।

গ্রামটি একসময় ছিল টঙ্গী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে। এলাকার লোকজন বলছেন, ওয়ার্ড ১ নম্বর হলেও নাগরিক সুবিধা পাওয়ার দিক দিয়ে তাঁরা ছিলেন সবচেয়ে পিছিয়ে। সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর তাঁদের আশা ছিল ‘বঞ্চনার’ অবসান হবে। কিন্তু তা হয়নি। ৬ বছরেও নানা নাগরিক সুবিধা পাননি এখনকার বাসিন্দারা।

গতকাল শনিবার সকালে আন্দারোল গ্রামের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশের মাঠে কথা হয় বেশ কয়েকজন বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিকের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, সিটি করপোরেশন হওয়ার পরও তাঁদের হতাশা কাটেনি। তবে তাঁদের স্বপ্ন, একদিন এই অবস্থার অবসান হবে।

ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দা মোবারক হোসেন বলেন, পাঁচ–ছয় বছর আগের কথা। তখন আন্দারোলসহ কয়েকটি গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল না। স্থানীয় সাংসদ ও প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান বাকরাল ব্রিজে কর্মী সমাবেশে এলে বিদ্যুতের দাবিতে মিছিল নিয়ে সেখানে হাজির হন আন্দারোলের বাসিন্দারা। তার মাস ছয়েক পর বিদ্যুৎ আসে। তবে এখনো অনেক বাড়িতে বিদ্যুৎ–সংযোগ নেই। এসব বাড়ির বাসিন্দারা অন্যের বাড়ি থেকে সংযোগ এনে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন।

স্থানীয় ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম বলেন, আন্দারোলে বিদ্যুৎ এসেছে। আলোকিত হয়েছে গ্রামগুলো। কিন্তু গ্রামে বড় কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। আর শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা না গেলে সামাজিক অন্ধকার কাটানো যাবে না।

আন্দারোল ছাড়া বাদে পলাশোনা, ভাদাম, চক ভাদাম, ভাকরুল, দাড়াইল, গুশুলিয়া, গুটিয়া, জামালদিয়া, কাকিল সাতাইশ, রাজকুর ও তিলারগাতি এলাকা পড়েছে ৫২ নম্বর ওয়ার্ডে। ওয়ার্ডের বাসিন্দা প্রায় ৫০ হাজার। ভোটার সংখ্যা ১২ হাজার ১২৮ জন। ওয়ার্ডে দুটি উচ্চবিদ্যালয় ও দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। অনেকগুলো পোশাক কারখানা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান থাকায় এই এলাকায় অনেক শ্রমিক বসবাস করেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, ওয়ার্ডের অনেক রাস্তাঘাটের অবস্থা নাজুক। চলাচলের প্রায় অনুপযোগী। কোনো কোনে সড়কে জমে আছে কাদাপানি। ময়লা–আবর্জনা ফেলা হচ্ছে যত্রতত্র।

স্থানীয় লোকজন বলেন, এলাকায় কাঁচাবাজার, কমিউনিটি সেন্টার বা চিকিৎসাকেন্দ্র নেই। এ ছাড়া আছে মাদকের সমস্যা। দিন দিন মাদক ব্যবসায়ীদের উপদ্রব বাড়ছে।

আন্দারোল গ্রামের বাসিন্দা রিনা বেগম বলেন, ‘দেখে যান আমাদের রাস্তাঘাটের কী অবস্থা! বৃষ্টি হলে বাড়ি থেকে বের হওয়া যায় না।’

তিলারগাতি এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ভেবেছিলাম সিটি করপোরেশন হলে এলাকার উন্নয়ন হবে। কিন্তু কিছুই হয়নি। নির্বাচন এলে আশার বাণী শোনা যায়। কিন্তু বাস্তব রূপ আর দেখা যায় না। এলাকার রাস্তাগুলোর সংস্কার ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা খুবই জরুরি।’

ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুল আলী মোল্যা প্রথম আলোকে বলেন, ‘পর্যাপ্ত পরিমাণে বরাদ্দ না পাওয়ায় এলাকার বেশির ভাগ রাস্তাঘাট এখনো ভাঙাচোরা। এখন নতুন করে বরাদ্দের অপেক্ষায় আছি। এলাকায় কিছু সড়কে সৌরবাতি লাগানো হয়েছে। কিছু রাস্তার সলিং করা হয়েছে।’