রাজশাহীতে ৩৮ বছর ধরে সমাজের পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা চালাতে গিয়ে সংসার পাতেননি জালাল উদ্দিন। পৈতৃক জমি বিক্রি করে অর্থ ঢেলেছেন শিক্ষার্থীদের পেছনে। দুটি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী এই জালাল উদ্দিন এখন অসহায়। ছিলেন হাসপাতালে। ছাড়া পেয়ে উঠেছিলেন একটি আবাসিক হোটেলে। কাছের টাকাপয়সা শেষ। গতকাল শুক্রবার তিনি অসুস্থ শরীর নিয়ে রাজশাহী প্রেসক্লাবে এসে উঠেছেন। তাঁর যাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই।
জালাল উদ্দিনের শিক্ষা কার্যক্রমের ওপরে ২০০৮ সালের ১১ অক্টোবর প্রথম আলোর সাপ্তাহিক ক্রোড়পত্র ছুটির দিনে ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর একটি সংখ্যায় তাঁর বিশেষ সাক্ষাৎকার ছাপা হয়।
জালাল উদ্দিন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেও কোনো সনদ নেননি। দুটি বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেন তিনি। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে শিক্ষায় এগিয়ে নেওয়ার জন্য তিনি ভালো চাকরি পাওয়ার পরও তা না করে বিনা পয়সায় এই শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যান। বিয়ে করে সংসারী হলে এ কার্যক্রমের ক্ষতি হতে পারে ভেবে জালাল উদ্দিন বিয়েই করেননি। নিজের জায়গাজমিও বিক্রি করতে হয়েছে তাঁর। বর্তমানে তাঁর নিজের কোনো ঘরবাড়ি নেই। রাজশাহী নগরের রানিবাজার এলাকায় তাঁর বোনের বাসায় থাকতেন।
চার বছর আগে বাচ্চাদের জন্য পাঠশালায় বই নিয়ে যাওয়ার সময় পা পিছলে পড়ে জালাল উদ্দিনের পা ভেঙে যায়। সেই থেকে নানা অসুস্থতা তাঁর পিছু ছাড়েনি। শিক্ষা কার্যক্রমও আর চালাতে পারেননি। পা ভাঙার সময় প্রথম আলোর পক্ষ থেকে তাঁকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল। এরপর মাস দু–এক আগে আবার তিনি অসুস্থ হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এদিকে বোন মারা যাওয়ার পর বোনের বাসায় থাকার আর পরিবেশ নেই। তাঁর ভাগনেরা বাইরে থাকেন। তাঁকে দেখভাল করার কেউ নেই। শুধু সময়মতো পানি না খেতে পেয়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। এ জন্য হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে এবার একটি আবাসিক হোটেলে উঠেছিলেন। কাছের টাকাপয়সা সব শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে গতকাল শুক্রবার তিনি হোটেল ছেড়ে দেন। দুপুর ১২টার দিকে তিনি রাজশাহী প্রেসক্লাবে এসে উঠেছেন। বলছেন, রাতে সেখানেই থাকবেন।