নতুন বোরোর দাম নেই। তার ওপর ‘ঢলতা’র বোঝা। চূড়ান্ত হতাশায় পেয়ে বসেছে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ধানচাষিদের।
আড়তদারদের কাছে ধান বিক্রি করলে দুই মণ হিসাবে বাড়তি তিন কেজি ধান দিতে হয় কৃষকদের। স্থানীয়ভাবে অতিরিক্ত এ ধানকেই ঢলতা বলা হয়। বিষয়টি সম্পূর্ণ অনিয়ম হলেও সেটাই এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় ও কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় ২১ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে দুই সপ্তাহ ধরে কৃষকেরা উচ্চ মূলে শ্রমিক নিয়োগ করে খেতের ধান কাটছেন। ঋণ পরিশোধ, শ্রমিকের খরচ মেটাতে নতুন ধান বাজারে আনছেন। এক একর ধান চাষ করতে খরচ হয়েছে স্থানভেদে ৩২ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। বর্তমানে একজন শ্রমিকের পারিশ্রমিক হচ্ছে এক হাজার টাকা। কিন্তু বাজারে এক মণ চিকন বোরো ধান বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকায়। আর মোটা বোরো বিক্রি হচ্ছে ৪২০ থেকে ৪৬০ টাকায়। ৮০ কেজি ধানে দুই মণ হলেও স্থানীয়ভাবে ৮৩ কেজি ধানে দুই মণ ধরছেন আড়তদারেরা। বাজারে ধানের ন্যায্যমূল্য না পেলেও কৃষকদের প্রতি দুই মণে অতিরিক্ত তিন কেজি ধান দিতে হচ্ছে আড়তদারদের। ঢলতার নামে তিন কেজি অতিরিক্ত ছাড়া আড়তদাররা ধান কিনতে চান না। কিন্তু কৃষকেরা চান ৮০ কেজি হিসাবেই দুই মণ ধান বিক্রি করতে। তাঁদের আপত্তিতে কোনো কাজ হচ্ছে না। এ অবস্থায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তাঁরা।
গত বৃহস্পতিবার তারাগঞ্জ উত্তর বাজার ও নালিতাবাড়ী বাজার ধানের আড়ত ঘুরে ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার বাইরে থেকে কোনো আড়তদার পৌরশহরে সরাসরি ধান কিনতে পারেন না। তাই বাজারে ধান কেনার কোনো প্রতিযোগিতা নেই। সেই সুযোগে স্থানীয় আড়তদারেরা ইচ্ছেমতো ধানের দাম নির্ধারণ করছেন।
বাজারে কৃষকেরা বলেন, দুই মণে তিন কেজি ধান বেশি নেওয়ার বিষয়টি তাঁদের কাছে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বস্তা ধান আড়তে নেওয়ার পর মাপার সময় বস্তার বদলে একটি বস্তা দেওয়ার কথা থাকলেও বস্তার পরিবর্তে এক কেজি এবং তথাকথিত ঢলতার নামে ২ কেজি দিয়ে মোট ৮৩ কেজি ধান কৃষকদের দিতে হচ্ছে। উপজেলার কুন্নগর গ্রামের কৃষক আল হেলাল বলেন, ‘এই অনিয়মডা আমগর বাজারে নিয়মে পরিণত হইছে।’ গোজাকুড়ার উল্লাপাড়া গ্রামের কৃষক ইসমাইল হোসেন এদিন ৩০ মণ ধান বাজারে এনেছিলেন। কিন্তু কোনো ক্রেতা দাম বলেননি। তিনি বলেন, ‘যদি বাইরের আড়তদারদের ধান কেনার সুযোগ থাকত, তাহলে কৃষকেরা ন্যায্যমূল্য পেতেন।’
কাকরকান্দি গ্রামের কৃষক আবু হানিফ জানান, বাজারে ধানের দাম নেই। তারপরও ঢলতার বোঝা। কৃষকদের কথা বিবেচনা করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এর একটা স্থায়ী সমাধান করা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে নালিতাবাড়ী খাদ্যশস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, সব আড়তদারের সম্মতিক্রমে বস্তার ওজন অনুযায়ী এক কেজি ও ধানের ঘাটতির জন্য ঢলতা হিসেবে দুই কেজি করে কৃষকদের কাছ থেকে নেওয়া হয়ে থাকে। তিনি বলেন, ‘ধানের মূল্য নির্ধারণে আমাদের কোনো হাত নেই। ধানের মান অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করা হয়। বাইরের কেউ ধান কিনতে চাইলে স্থানীয় আড়তদারদের মাধ্যমে কেনার সুযোগ রয়েছে।’ ইউএনও আরিফুর রহমান বলেন, ‘কৃষকদের কাছ থেকে ৮০ কেজির স্থলে ৮৩ কেজি ধান নেওয়া হয় বলে শুনেছি। আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি স্থায়ী সমাধানের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’