৭০ বছর আগে হারিয়ে গিয়েছিলেন ১০ বছরের আবদুল কুদ্দুস মুন্সী। গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর ৮০ বছরের বৃদ্ধ ছেলে ফিরে এসে শতবর্ষী মা মঙ্গলের নেছার সঙ্গে দেখা করেন। এরপর নভেম্বরে বৃদ্ধা মাকে আবারও দেখতে যান তিনি। ১২-১৩ দিন মায়ের সঙ্গে থাকেন, কথা বলেন। কিন্তু এবার আর মায়ের সঙ্গে দেখা হবে না কুদ্দুসের। বৃদ্ধা মা চলে গেছেন না–ফেরার দেশে।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল নয়টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আশ্রাববাদ গ্রামে ছোট মেয়ে ঝরনা বেগমের বাড়িতে মঙ্গলের নেছা (১১০) শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। আজ বিকেলে আশ্রাববাদ গ্রামে তাঁর জানাজা হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানেই তাঁকে দাফন করা হবে। একমাত্র ছেলে কুদ্দুস বর্তমানে স্ত্রী–সন্তান নিয়ে রাজশাহীর বাঘমারার বাড়ুইপাড়া গ্রামে থাকেন। মায়ের মৃত্যুর সংবাদ পেয়েছেন তিনি। কিন্তু শেষবারের জন্য মাকে দেখতে পাবেন না। রাজশাহী থেকে আজ রাতে বা শুক্রবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশে রওনা হবেন। এসে মায়ের কবর জিয়ারত করবেন তিনি।
নওগাঁর আত্রাই উপজেলার সিংড়া বাজারের ব্যবসায়ী আইয়ুব আলী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের প্রকৌশলী শফিকুল ইসলামের উদ্যোগে ৭০ বছর পর মা-ছেলের দেখা হয়। তাঁরা দুজনই মুঠোফোনে কুদ্দুসের মায়ের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। শফিকুল ইসলাম বলেন, বেলা তিনটায় আশ্রাববাদ গ্রামে কুদ্দুসের মায়ের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে এবং ওই গ্রামেই তাঁকে দাফন করা হবে।
আবদুল কুদ্দুসের ছোট ছেলে সোহেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাবা দাদির মৃত্যুর সংবাদ পেয়েছেন। এর পর থেকেই তিনি তাঁর মায়ের জন্য কান্না করছেন। আমরা সবাই দাদির জন্য দোয়া করছি। বৃহস্পতিবার রাতে বা শুক্রবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশে রওনা হবেন বাবা।’ তিনি আরও বলেন, দাদির সঙ্গেই থাকতে চেয়েছিলেন বাবা। দাদিকে নিয়ে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দাদি অসুস্থ ছিলেন। চলাফেরা করতে পারতেন না।
আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘গত বছর অসুস্থ হওয়ার পর মায়ের কথা মনে পড়ে। পাশে বেটি-বউ বসে কান্না করা শুরু করল। তখন আমি কইছি, আমার মা (মঙ্গলের নেছা) ডাকিছে। আমি মার কাছে যাব। তখন হেরা (সন্তানেরা) বলিছে, আমি পাগল। আমার বিশ্বাস ছিল যে আমার মা বেঁচে আছে। মাকে দেখার জন্যই আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। কিন্তু মা আমারে ছেড়ে একবারে চলে গেলেন।’
কুদ্দুস ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শ্যামগ্রাম সলিমগঞ্জ ইউনিয়নের বাড্ডা গ্রামের মৃত কালু মুন্সীর ছেলে। বয়স যখন ৬-৭ বছর, তখন তাঁর বাবা মারা যান। বাবার মৃত্যুর পর মা ছেলেকে পড়াশোনার জন্য ফুফা পুলিশের দারোগা আবদুল আওয়ালের কাছে রাজশাহীর বাগমারায় পাঠান। সেখানে ফুফুর বকা খেয়ে অভিমান করে বাড়ি ছেড়ে নিখোঁজ হন কুদ্দুস। ১০ বছর বয়সে হারিয়ে যাওয়া সেই ছেলের বয়স এখন ৮০ বছর। ৭০ বছর পর মা, বোন ও আত্মীয়স্বজনকে ফিরে পেয়ে গত ২৫ সেপ্টেম্বর কুদ্দুস সন্তানদের নিয়ে শতবর্ষী মাকে দেখতে আশ্রাববাদ গ্রামে বোন ঝরনা বেগমের বাড়িতে যান। সে সময় নবীনগরের বাড্ডা গ্রামের জন্মভিটা ও বাবার কবর জিয়ারত করেন তিনি। এক মাস চার দিন পর গত ২ নভেম্বর স্ত্রীকে নিয়ে আবারও মায়ের কাছে যান কুদ্দুস। এরপর আর মায়ের সঙ্গে কুদ্দুসের থাকা হয়নি। তবে মুঠোফোনে নিয়মিত মায়ের সঙ্গে কথা বলতেন তিনি।