আশরাফ আলী ব্যাপারীর বয়স এখন ৬২ বছর। থাকেন বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার চাখার ইউনিয়নের সোনাহার গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে। জমিজমা না থাকায় মানুষের কাছে চেয়েচিন্তে জীবিকা নির্বাহ করা আশরাফের সংসার পাতা হয়নি।
বানু বেগমের বয়স ৫৪ বছর। কয়েক বছর আগে তাঁর স্বামী মারা যান। এরপর একই আশ্রয়ণ প্রকল্পে থাকতেন মেয়ে ও জামাতার সঙ্গে, করতেন ঝিয়ের কাজ। শেষ জীবনে এসে নিঃসঙ্গতা আর নির্ভরতার অভাব দুজনই অনুভব করছিলেন ভীষণভাবে। দুজনের পরিচয়ের পর দেখা হতো, কথা হতো। এরপর তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন একসঙ্গে বাকিটা পথ পাড়ি দেওয়ার। শনিবার রাতে ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পে অনেকটা ঘটা করেই বিয়ে করেন তাঁরা।
এ বিয়ের আয়োজন ঘিরে স্থানীয় মানুষের কৌতূহল-উদ্দীপনার কমতি ছিল না। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, আশ্রয়ণের বাসিন্দা ও আশপাশের গ্রামের কয়েক শ লোক অংশ নেন বিয়ের আয়োজনে। এক লাখ এক টাকা দেনমোহরে বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়। বর নগদ ৫০ হাজার টাকা দেনমোহর কনেকে পরিশোধও করে দেন বিয়ের আসরে।
চাখার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মজিবুল হক বলেন, ইউনিয়নের সোনাহার গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা আশরাফ আলী ব্যাপারী আগে বিয়ে করেননি। তাঁর কোনো সংসার ছিল না। একাই জীবন কাটাতেন। একই প্রকল্পের বাসিন্দা মোসাম্মৎ বানু বেগমের স্বামী মারা যাওয়ার পর মেয়ে ও জামাতার সঙ্গে থাকলেও নিঃসঙ্গ জীবন কাটাতেন তিনিও। এ অবস্থায় তাঁরা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। এর মধ্যে উভয়ের প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে উঠলে অবশেষে পরিবারের সম্মতিতে শনিবার রাতে ঘটা করেই তাঁদের বিয়ে সম্পন্ন হয়।
মজিবুল হক আরও বলেন, বিয়েতে আশ্রয়ণের বাসিন্দা ছাড়াও আশপাশের গ্রামগুলো থেকে কৌতূহলী বাসিন্দারা যোগ দেন। নবদম্পতিকে শুভেচ্ছা ও শুভকামনা জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে উপস্থিত সবাইকে মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।
বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে আশরাফ আলী তিনি বলেন, ‘বয়স যখন কম ছিল, তখন ভাবিনি, বয়স যত বাড়ে, মানুষের জীবনে ততই নিঃসঙ্গতার কষ্ট বাড়ে। একলা থাকতে খুব কষ্ট হতো, সময়মতো খাওয়া-দাওয়া হতো না। নিজের কথা কাউকে খুলে বলতে পারতাম না। এখন দেরিতে হলেও মনের মধ্যে যে কষ্ট ছিল, তা দূর হলো।’
বানু বেগম বলেন, ‘মুইও এত দিন পর একটা ভরসা করনের মতো মানুষ পাইছি। সুখ-শান্তিতে যাতে বাহি জীবনডা কাটাইতে পারি, এই জন্য সবাই মোগো জন্য দোয়া করবেন।’