জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিচ্ছে দুদক।
ইজারা নেননি কিংবা বরাদ্দও পাননি, তবু খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের মালিকানাধীন আবাসিক হোটেলটি পাঁচ বছর দখলে রাখেন আওয়ামী লীগ নেতা জাহেদুল আলম। কাছে ঘেঁষতে দেননি প্রকৃত ইজারাদারকে। পরে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা করলে সরে পড়েন তিনি। এখন সেই মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে দুদকের প্রধান কার্যালয়।
জাহেদুল আলম পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য। অবশ্য দলের বিরুদ্ধে গিয়ে ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় দল থেকে সাময়িক বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। পরে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হলেও ২০১৫ সালের পৌর নির্বাচনে আবারও দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে সাময়িক বহিষ্কৃত হন। এরপর তাঁর আবেদেনের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে জেলার উপদেষ্টা কমিটির সদস্য করা হয়।
জাহেদুল আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়ার অনুমোদন পাওয়ার কথা নিশ্চিত করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় অভিযোগপত্র দাখিলের জন্য অনুমোদন চাওয়া হয়। ১০ নভেম্বর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে আদালতে জমা দেওয়া হবে।
দুদক সূত্র জানায়, জেলা পরিষদের মিমি সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় নির্মিত আবাসিক হোটেল ইজারা দেওয়ার জন্য ২০১৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তিন দরদাতার মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে মেসার্স কংলী অ্যান্ড কোম্পানির স্বত্বাধিকারী অমিত চাকমাকে ইজারা দেওয়া হয় পরের বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি। পরবর্তী সময়ে তিনি ভাড়া, জামানত বাবদ জেলা পরিষদে ১১ লাখ ১৯ হাজার ৭২০ টাকা পরিশোধ করেন।
এ ঘটনায় দুদক কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে ২০১৯ সালের ২ এপ্রিল খাগড়াছড়ি থানায় মামলায় করেন। মামলায় আসামি করা হয় জাহেদুল আলমকে। এজাহারে বলা হয়, ২০১৫ সালের জাহেদুল আলম পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর তিনি জেলা পরিষদ থেকে অন্য ব্যক্তিকে ইজারা দেওয়া একটি হোটেল দখলে নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। এ বিষয়ে ইজারা পাওয়া অমিত চাকমা জেলা পরিষদ বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেন। পরিষদের পক্ষ থেকে জাহেদুলের কাছে কারণ ব্যাখ্যা চাওয়া হলে তিনি কোনো উত্তর দেননি। পরে দুদক বিষয়টি তদন্ত করে থানায় মামলা করে। জেলা পরিষদের ইজারা দেওয়া হোটেল দখলে রেখে পরিষদকে ভাড়া না দেওয়ায় ১৯ লাখ ৮২ হাজার টাকার ক্ষতি হয়। ক্ষমতার অপব্যবহার করে ইজারাপ্রাপ্ত ঠিকাদারকে দখলে যেতে না দিয়ে জোরপূর্বক দখলে রাখেন।
দুদক মামলা করার পরের মাসেই (২০১৯ সালের মে মাস) হোটেল ছেড়ে দিয়ে ভাড়া বাবদ সব টাকা জেলা পরিষদকে পরিশোধ করেছেন বলে জানান জাহেদুল আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ইজারাদারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে কিংবা জোর করে হোটেলটি দখল করেননি। ইজারাদার এটি চালাতে না পারায় তিনি পাঁচ বছর ধরে চালিয়েছেন। মামলা হওয়ার পর কেন হোটেলটি ইজারাদারকে ফেরত ও ভাড়ার টাকা পরিশোধ করলেন—এ প্রশ্নের জবাবে পাশ কাটিয়ে তিনি বলেন, দুদক আসামি করলে আইনগতভাবে মোকাবিলা করবেন।
পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ বশিরুল হক ভূঞা বলেন, দুদক মামলা করার পর হোটেলটি দখলে নেওয়া ব্যক্তি ইজারাদারকে ফেরত দেন। বকেয়া টাকা সব ভাড়া জেলা পরিশোধকে পরিশোধ করেন। ইজারাপ্রাপ্ত ব্যক্তি এখন হোটেলটি পরিচালনা করছেন।
খাগড়াছড়ি বাজারে শাপলা চত্বর থেকে ১০০ গজ দূরে জেলা পরিষদের আওতাধীন মিমি সুপার মার্কেট। এটির তৃতীয় তলায় হোটেল এবং চতুর্থ তলায় রান্নাঘর। ২০১৫ সালের ২৯ মার্চ থেকে জাহেদুল হোটেল আল আমিন অ্যান্ড কফি হাউস নামে ব্যবসা পরিচালনা শুরু করেন। হোটেলের চতুর্থ তলায় রান্নাঘর নির্মাণ করা হলেও সেটিও জাহেদুল দখলে রেখেছিলেন।
জাহেদুল আলমের কর্মকাণ্ড নিয়ে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ব্যক্তির দায়ভার দল নেবে না। যেমন কর্ম করবে, তাঁকে তেমন ফল ভোগ করতে হবে।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে কেউ রাষ্ট্রীয় সম্পদ দখল করলে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, একজনের শাস্তি না হলে অন্যরা উৎসাহিত হবে।