চতুর্থ ধাপে ৫৫টি পৌরসভার মধ্যে ৯টি পৌরসভায় বিএনপির ৮ জনসহ ১২ মেয়র প্রার্থী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। এই ৯ পৌরসভা হলো চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর, লক্ষ্মীপুরের রামগতি, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর, মুন্সিগঞ্জের মীরকাদিম, নাটোরের বড়াইগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, রাজশাহীর বাগমারার তাহেরপুর ও বাগেরহাট। আজ রোববারের ভোট নিয়ে তাদের অভিযোগ, ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারছেন না। এজেন্টদের বের করে দেওয়া হচ্ছে।
আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
চাঁদপুর: ফরিদগঞ্জে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইমাম হোসেন পাটোয়ারী শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সকাল ১০টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। তিনি অভিযোগ করেন, নির্বাচনে ভোট দেওয়ার পরিবেশ নেই। লোকজন ভোট দিতে পারছেন না। নানা ধরনের অনিয়ম হচ্ছে। এসবের প্রতিবাদে তিনি ভোট বর্জন করেছেন।
চুয়াডাঙ্গা: জীবননগরে বিএনপির মেয়র প্রার্থী শাহজাহান কবির অভিযোগ করেছেন, ৪৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪৩টিতে তাঁর এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের লক্ষ্মীপুর কেন্দ্রে শুধু এজেন্টকে ঢুকতে দেওয়া হয়। তবে ১০ মিনিট পর তাঁকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মুনিম লিংকনের কাছে অভিযোগ করা হলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি বলে তাঁর দাবি। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউএনও বলেন, কোনো এজেন্টকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়নি। বিএনপি সব কেন্দ্রে এজেন্ট দিতে পারেনি।
লক্ষ্মীপুর: রামগতি পৌরসভা নির্বাচন বর্জন করেছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাহেদ আলীসহ চারজন মেয়র প্রার্থী। বাকি তিনজন হলেন জাতীয় পার্টির আলমগীর হোসেন (লাঙল), স্বতন্ত্র প্রার্থী আবি আবদুল্লাহ (নারিকেল গাছ) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জামাল উদ্দিন (জগ)। ভোটগ্রহণের সময় এজেন্টদের মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া ও গোপন বুথে নৌকার এজেন্টদের অবস্থান নেওয়ার অভিযোগে সকাল ১০টার দিকে তাঁরা ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
সাহেদ আলী অভিযোগ করেন, কেন্দ্র থেকে বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেওয়া হচ্ছে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের ভোট দিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। ভোট দেওয়ার জন্য কয়েকজন কর্মী ও সমর্থক কেন্দ্রে গেলে তাদের বের করে দিয়েছেন নৌকার লোকজন। এ দেশে আর সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী আলমগীর হোসেন বলেন, ‘৭ নম্বর ওয়ার্ডের কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোট দিতে গেলে আমাকেও বের করে দেওয়া হয়। পরে আমার পরিবারের লোকজনকে নিয়ে ভোট না দিয়ে কেন্দ্র থেকে চলে আসি।’
তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এম মেজবাহ উদ্দিন বলেন, বিএনপির কোনো এজেন্ট বের করে দেওয়া হয়নি। নিশ্চিত পরাজয় জেনে তাঁরা ভোট বর্জন করেছেন।
লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ নাজিম উদ্দীন বলেন, ‘বর্জনের কথা শুনেছি। তবে কেউ আমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানাননি। বিএনপির এজেন্ট বের করে দেওয়ার কোনো অভিযোগ পাইনি।’
কিশোরগঞ্জ: বাজিতপুরে বিএনপির প্রার্থী এহসান কুফিয়া সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, ১২টি কেন্দ্রে বিএনপির এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ইভিএমের ভোটের নিয়ন্ত্রণ আওয়ামী লীগের লোকজন নিয়ে নিয়েছেন। তিনি এসব অনিয়মের জন্য প্রশাসনকে দায়ী করেন। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও বাজিতপুরের ইউএনও দীপ্তিময়ী জামান।
মুন্সিগঞ্জ: মীরকাদিম পৌরসভা নির্বাচনে নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মিজানুর রহমান বেলা পৌনে তিনটার দিকে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। পৌরসভার রামগোপালপুর দুধপট্টি এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ ঘোষণা দেন। তিনি অভিযোগ করেন, সকালে ভোট ভালোভাবে শুরু হয়। তবে সকাল ১০টার পর থেকে সরকারদলীয় মেয়র প্রার্থীর লোকজন নানা অনিয়ম শুরু করেন।
নাটোর: এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া, ভোটারদের জোর করে নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে বাধ্য করাসহ নানা অভিযোগ তুলে নাটোরের বড়াইগ্রাম পৌরসভা নির্বাচনের ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইসাহাক আলী। দুপুর দেড়টায় নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ ঘোষণা দেন।
বিএনপির ভোট বর্জন সম্পর্কে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মাজেদুল বারী বলেন, ‘ধানের শীষের প্রার্থী জেতার জন্য তো ভোটে দাঁড়াননি। তাই তিনি প্রচার-প্রচারণাতেও ছিলেন না। আজ তিনি ভোট দিতে কেন্দ্রেও যাননি। তাই ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে দায় সেরেছেন। এটা তাঁদের পূর্ব পরিকল্পিত।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া: আখাউড়া পৌরসভা নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী যুবলীগ কর্মী শফিকুল ইসলাম খান সকাল ১০টায় ভোট বর্জন করেন। তিনি অভিযোগ করেন, ‘ভোটের সুষ্ঠু কোনো পরিবেশ নেই। নৌকার লোকজন জোর করে নৌকায় ভোট দিতে ভোটারদের বাধ্য করছেন। ভোটাররা আঙুলের ছাপ দেওয়ার পরপরই নৌকার লোকজন নিজেদের পক্ষে ভোট দিয়ে দিচ্ছেন।’
রাজশাহী: নির্বাচন শেষ হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগে সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকার অভিযোগে ভোট বর্জন করেছেন রাজশাহীর বাগমারার তাহেরপুর পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থী আবু নঈম শামসুর রহমান ওরফে মিন্টু। তিনি অভিযোগ করেছেন, কেন্দ্র থেকে পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। সাতটি কেন্দ্র দখল করা ছাড়াও নৌকার প্রতীকে প্রকাশ্যে সিল মেরে নেওয়া হয়েছে। নৌকায় সিল মারতে ভোটারদের বাধ্য করা হয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন।
বাগেরহাট: এজেন্টদের কেন্দ্রে থেকে বের করে দেওয়া, মারধর, ইভিএমে আঙুলের ছাপ নেওয়ার পর নৌকায় ভোট দিয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী সাইদ নিয়াজ হোসেন শৈবাল। বেলা দুইটার দিকে বাগেরহাট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
আজ সকাল আটটা থেকে চতুর্থ ধাপে ৫৫টি পৌরসভায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। ৩৪ জেলার ৫৫টি পৌরসভার মধ্যে ২৯টিতে ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। আর ২৬টি পৌরসভায় ভোট হচ্ছে কাগজের ব্যালটে। এসব পৌরসভায় মোট ভোটার ১৬ লাখ ৬৭ হাজার ২২৪ জন। মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২১৭ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২ হাজার ৭০ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬১৮ জন। মোট ভোটকেন্দ্র ৭৯৩টি।