মেঘনার ভাঙন রোধ

সাড়ে তিন কোটি টাকার কাজ এলাকাবাসীর উদ্যোগে

জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে নদীতে। আজ সকালে নোয়াখালীর হাতিয়ার নলচিরাঘাট এলাকায়
 ছবি: প্রথম আলো

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় মেঘনার ভাঙন এখন তীব্র। পাড় ভেঙে লোকালয়ের দিকেই এগোচ্ছে নদী। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) একটি প্রকল্পও নেয়। কিন্তু নানা জটিলতায় আটকে গেছে সেই প্রকল্প। উপায় না দেখে নিজেরাই উদ্যোগী হলেন নদীপারের মানুষ। নিজেদের টাকায় হাত দিলেন নদীর তীর রক্ষার কাজে। ফেলছেন জিও ব্যাগ। এই কাজে ব্যয় হবে সাড়ে তিন কোটি টাকা। গত এক মাসে সংগ্রহ হয়েছে ৬৮ লাখ টাকার বেশি।

আজ রোববার সকালে মিলাদ ও দোয়ার মাধ্যমে এই কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে। করোনা মহামারির কারণে উদ্বোধনের আয়োজনটি ছিল সংক্ষিপ্ত পরিসরে। হাতিয়ার নলচিরা ঘাটে এই উদ্বোধন অনুষ্ঠানে হাতিয়া উপজেলা নদী শাসন ও তীর সংরক্ষণ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

স্থানীয় লোকজন ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি মেঘনার অব্যাহত ভাঙন হাতিয়ার সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক কেন্দ্র আফাজিয়া বাজারের কাছাকাছি চলে আসায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আফাজিয়া বাজারের ব্যবসায়ীরা একত্র হয়ে নিজস্ব অর্থায়নে নদীতে আপাতত জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করার সিদ্ধান্ত নেন। প্রাথমিক আলোচনার পর গঠন করা হয় ‘হাতিয়া নদী শাসন ও তীর সংরক্ষণ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন’। সংগঠনের বৈঠকে প্রাথমিকভাবে নলচিরা ঘাটের পূর্ব পাশের চর ইশ্বর অংশে ৫০০ মিটার এবং পশ্চিম পাশে চরকিং অংশে ২০০ মিটারসহ ৭০০ মিটার এলাকায় নদীর তীর রক্ষায় জিও ব্যাগ ফেলার সিদ্ধান্ত হয়। এ জন্য পরামর্শ নেওয়া হয় পাউবো কর্মকর্তাদের। প্রাথমিক পর্যায়ে এই কাজে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে তিন কোটি টাকা।

প্রাথমিক পর্যায়ে এই কাজে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে তিন কোটি টাকা। গত এক মাসে অনুদান জমা পড়েছে প্রায় ৬৮ লাখ ১৫ হাজার টাকা।

গত ৪ এপ্রিল ৫১ সদস্যের কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে সংগঠনটির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। কমিটির সভাপতি করা হয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চরকিং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহম্মেদকে এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মহিউদ্দিনকে। সংগঠনটির প্রধান উপদেষ্টা করা হয়েছে সাবেক সাংসদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলীকে। তিনি ইতিমধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ব্যক্তিগত তহবিল থেকে নগদ ২০ লাখ টাকা ও ৪ লাখ ঘনফুট বালু অনুদান হিসেবে দিয়েছেন।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মহিন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ৩ এপ্রিল থেকে অনুদান সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গত এক মাসে নদীর তীর রক্ষায় অনুদান জমা পড়েছে প্রায় ৬৮ লাখ ১৫ হাজার টাকা, যা সংগঠনের নিজস্ব ব্যাংক হিসাবে রাখা হয়েছে। স্থানীয় অবস্থাসম্পন্ন ব্যক্তিরা পাঁচ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত অনুদান দিয়েছেন। প্রকল্প বাস্তবায়নে গাজীপুরের একটি কারখানা থেকে দুই ধাপে আনা হয়েছে ২৪ হাজার জিও ব্যাগ। বালুভর্তি ও ডাম্পিংয়ের জন্য রংপুর জেলা থেকে আসা অভিজ্ঞ ৫০ সদস্যের একটি শ্রমিক দল এই কাজ বাস্তবায়ন করছে।

পাউবোর নোয়াখালী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাছির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, আগে হাতিয়ার নলচিরা ঘাটে পাউবোর উদ্যোগে জিও ব্যাগ পেলে সুফল পাওয়া গেছে। সেই হিসেবে স্থানীয় লোকজন যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তাতে সুফল পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য পাউবোর পক্ষ থেকে কারিগরি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। পাউবোর একজন কর্মকর্তাকে সেখানে সার্বক্ষণিক বিষয়টি তদারকি করার জন্য নিয়োজিত রাখা হয়েছে।