টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগ নেতা কল্যাণ বিহারি দাস হত্যাকাণ্ডের ৩৮ বছরেও বিচার পায়নি তাঁর পরিবার। পরিবারটি এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকে চেয়ে আছে।
পরিবারটির দাবি, কল্যাণ বিহারি হত্যাকাণ্ডের পর দলীয় সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কল্যাণ বিহারির বাড়িতে গিয়েছিলেন। এ সময় তিনি তাঁর মা–বাবাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে কল্যাণের হত্যাকারীদের বিচার করা হবে। কিন্তু এ পর্যন্ত দল চারবার ক্ষমতায় গেলেও এ হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কামাল হোসেনের পক্ষে ১৯৮১ সালের ৯ নভেম্বর সদর উপজেলার যুগনী হাটে তৎকালীন জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কল্যাণ বিহারি দাস প্রচারণায় যান। এদিন বিকেলে ওই হাটে নির্বাচনী মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়ার সময় বিএনপির সমর্থকেরা হামলা করেন। হামলাকারীদের ছুরিকাঘাতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন কল্যাণ বিহারি।
এ ঘটনায় টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলা করা হয়। মামলায় তৎকালীন বিএনপি সরকারের ধর্মমন্ত্রী আবদুর রহমানের পরিবারের লোক এবং কয়েকজন আত্মীয়স্বজনকে আসামি হন।
কল্যাণ বিহারির পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, তৎকালীন মন্ত্রীর স্বজনেরা আসামি হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। পরে ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা খোরশেদ আলম (বর্তমানে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি) বাদী হয়ে আদালতে পুনরায় নালিশি মামলা করেন। আদালত ঘটনার সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণের পর আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। আসামিপক্ষ এই মামলা বাতিলের জন্য টাঙ্গাইলের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আবেদন করেন। শুনানি শেষে জেলা ও দায়রা জজ আসামিদের আবেদন নাকচ করে দেন। পরবর্তী সময়ে আসামিরা জেলা ও দায়রা জজের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন মামলা করেন। হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ শুনানির পর আসামিদের রিভিশন খারিজ করে দেন। এরপর মামলাটি বিচারের জন্য নিম্ন আদালতে পাঠানো হয়। কিন্তু এরশাদ সরকারের আমলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মামলাটি রাজনৈতিক বিবেচনায় বিচারকাজ বন্ধ করা হয়। ফলে এই হত্যার আর বিচার হয়নি।
কল্যাণ হত্যার পর নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টাঙ্গাইল শহরের আদালত রোডে কল্যাণদের বাসায় আসেন।
কল্যাণ বিহারির ভাই বিমান বিহারি দাস গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, সেদিন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্বাস দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে কল্যাণ হত্যার বিচারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ চারবার সরকার গঠন করল, অথচ আজও হত্যাকারীদের বিচারের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। কল্যাণের বড় বোন বিন্দুবাসিনী সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষিকা শেফালী দাস কল্যাণ হত্যার বিচারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।