‘৩০ বছরেও কেউ কথা রাখেনি’

বর্ধিত অংশে প্রায় ৭০ হাজার মানুষের বসবাস। নিয়মিত কর দেন তাঁরা। তবে পৌরসভার সুযোগ-সুবিধা পান কম।

পৌরসভার বর্ধিত অংশে এখনো শহুরে ছোঁয়া লাগেনি। সরু আল দিয়ে যাতায়াত করতে হয় বাসিন্দাদের। সম্প্রতি নওগাঁ পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের চকমুক্তার এলাকায়

পৌরসভা হিসেবে নওগাঁ স্বীকৃতি পায় ১৯৬৩ সালে। ১৯৮৯ সালে গিয়ে আরও কিছু এলাকাকে পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বর্ধিত এই অংশে প্রায় ৭০ হাজার মানুষের বসবাস। তাঁদের একজন ৩ নম্বর ওয়ার্ডের দুর্গাপুর এলাকার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব আবদুল জব্বার।

৩০ বছরের বেশি সময় ধরে পৌর এলাকার অন্তর্ভুক্ত হয়ে সুবিধা কেমন পাচ্ছেন—জানতে চাইলে জব্বার বলছিলেন, ‘খালি খাজনাটা বেশি দিতে হয়। পৌরসভায় ঢুকার (অন্তর্ভুক্ত) পরেও হামরা (আমরা) বাড়তি সুবিধা পাইনি। ৩০ বছরেও কোনো মেয়র, কাউন্সিলর তাদের দেওয়া কথা রাখেনি।’

নওগাঁ পৌরসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হওয়ার কথা ৩০ জানুয়ারি। সম্প্রতি মধ্যদুর্গাপুর মোড়ের একটি চায়ের দোকানে এই ভোট নিয়েই কথা হচ্ছিল আবদুল জব্বারের সঙ্গে। ওই চায়ের দোকানে বসে গল্প করছিলেন আরও কয়েকজন। একজন বলছিলেন, ‘আমরা তো শুধু কর দেওয়ার বেলায় পৌরসভার বাসিন্দা। এলাকা দেখে কে বলবে এটা প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। রাস্তা নাই, পানি নাই, ড্রেন নাই। শুধু নাই আর নাই।’ তাঁর বক্তব্যকে সমর্থন করলেন অন্যরাও।

পৌরসভায় যুক্ত হওয়ার পরও মধ্যদুর্গাপুর এলাকার মতো বর্ধিত অংশের বাসিন্দারা গত ৩১ বছরেও শহুরে জীবনের তেমন একটা সুবিধা পাননি। এসব এলাকার বেশির ভাগ রাস্তাঘাট কাঁচা। নেই বর্জ্য ও পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা।

পৌরসভায় যুক্ত হওয়ার পরও মধ্যদুর্গাপুর এলাকার মতো বর্ধিত অংশের বাসিন্দারা গত ৩১ বছরেও শহুরে জীবনের তেমন একটা সুবিধা পাননি। এসব এলাকার বেশির ভাগ রাস্তাঘাট কাঁচা। নেই বর্জ্য ও পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা। পৌরসভার পানি সরবরাহ লাইন না থাকায় নলকূপ ও পুকুরের পানিই ভরসা। নিয়মিত কর দিলেও ন্যূনতম নাগরিক সেবা পাচ্ছেন না এসব এলাকার মানুষ।

নওগাঁ পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৯ সালে পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত হয় রজাকপুর, শেখপুরা, বোয়ালিয়া, জগৎসিংহপুর, খালিশকুড়ি, ভবানীপুর, সুলতানপুর জেলেপাড়া, কোমাইগাড়ি, বরুনকান্দি, শিবপুর, চকবাড়িয়া, দুর্গাপুর, চকমুক্তার ও চকরাম চন্দ্র গ্রাম। বর্তমানে জনসংখ্যা প্রায় পৌনে দুই লাখ।

৯ জানুয়ারি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নওগাঁ পৌরসভার বর্ধিত অংশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কোথাও পিচঢালা ও ইট বিছানো রাস্তা থাকলেও সংস্কারের অভাবে সেগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অনেক এলাকায় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় শুষ্ক মৌসুমেও পানি জমে আছে।

৯ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত ভবানীপুরের বাসিন্দা ও কলেজশিক্ষক মীর মোশাররফ হোসেন বলেন, পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত এলাকার বাসিন্দাদের করের সমপরিমাণ কর দেন বর্ধিত অংশের বাসিন্দারা। অথচ, বিদ্যুৎ ছাড়া কোনো সুবিধাই নেই বর্ধিত অংশে। পাঁচ বছর ধরে সরবরাহ লাইনে পানি আসার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এখনো আসেনি। ড্রেনের কথা বারবার বলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। বছরে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে জলাবদ্ধ থাকে।

বাড়ির সামনেই রোদে ধান শুকাচ্ছিলেন ভবানীপুরের বাসিন্দা সুফিয়া খাতুন। পৌর এলাকার সুবিধার বিষয়ে জানতে চাইলে হাস্যরসের ছলে বললেন, ‘খুব পাই। বর্ষাকালে হাঁটুসমান কাপড় তুলে রাস্তায় চলতে হয়।’

এদিকে বর্ধিত অংশের বাসিন্দাদের নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে এবারের নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন মেয়র পদের প্রার্থীরা। মেয়র পদে তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বর্তমান মেয়র ও বিএনপির প্রার্থী নজমুল হক বলেন, ‘পৌরবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পেরেছি বলেই পরপর দুবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। আমার আমলেই পৌরসভার বর্ধিত অংশে ১০ কিলোমিটার সরবরাহ পানির লাইন হয়েছে। রাস্তা পাকা হয়েছে প্রায় ২০ কিলোমিটার। বিএনপির মেয়র হওয়ায় বাজেট বঞ্চনার শিকার হওয়ার পরও কিছু উন্নয়ন হয়েছে।’

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী নির্মল কৃষ্ণ সাহা বলেন, ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে বর্ধিত পৌরসভার মানুষ উন্নয়ন বঞ্চনার শিকার হয়ে আসছেন। তিনি নির্বাচিত হলে পৌরসভার সব এলাকার বাসিন্দাদের সমান সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী ইকবাল শাহরিয়ার পানি সরবরাহ, জলাবদ্ধতা নিরসন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের আশ্বাস দিচ্ছেন।