প্রথমবারের মতো একজন প্রতিবন্ধী, দুজন কিশোরীসহ ৩১ জন সাঁতারু বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিলেন। কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ থেকে সেন্ট মার্টিন পর্যন্ত ১৬ দশমিক ১ কিলোমিটার দূরত্বের বঙ্গোপসাগরের স্রোতোধারাটির নাম ‘বাংলা চ্যানেল’। এ চ্যানেলের ১৪ তম সাঁতারে ৩৪ জন দেশীয় সাঁতারু অংশ নেন।
পানিতে ডুবে মরা থেকে রক্ষা পেতে সচেতনতা সৃষ্টি করতে ষড়জ অ্যাডভেঞ্চার ও এক্সট্রিম বাংলার আয়োজনে এই ১৪ তম ফরচুন বাংলা চ্যানেল সাঁতার প্রতিযোগিতার। গতকাল সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে শুরু হয় সাঁতার। এবার ৩৪ জনের মধ্যে ৩১ জন সফলভাবে পাড়ি দিতে পেরেছেন। এর মধ্যে সাজ্জাদ হোসেন ২ ঘণ্টা ৫৯ মিনিট সময় নিয়ে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাট থেকে সাঁতরে বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে পৌঁছান। দ্বিতীয় হয়েছেন মো. নয়ন আলী। তিনি সময় নিয়েছেন ৩ ঘণ্টা ৩৩ মিনিট ও তৃতীয় হয়েছেন (২০১৮ সালে রেকর্ডধারী ৩ ঘণ্টা ৮ মিনিট ৭ সেকেন্ডে) সাইফুল ইসলাম রাসেল। তিনি এবার সময় নিয়েছেন ৩ ঘণ্টা ৫০ মিনিট।
অনন্য দুই কিশোরী
গাইবান্ধা এনএইচ মডার্ন উচ্চবিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সোহাগী আক্তার (১৩)। সে গাইবান্ধা সদরের পূর্ব সবুজপাড়ার বাসিন্দা গোলাম রব্বানী ও বেলি আক্তারের মেয়ে। ৫ ঘণ্টা ৩ মিনিট ৩ সেকেন্ডে সে চ্যানেল পাড়ি দিয়েছে।
আরেক কিশোরী বগুড়া সদরের জামিল নগরের বাসিন্দা মোছাম্মৎ মিতু আখতার (১৬) মো. মোফাজ্জল হোসেন ও রহিমা বেগমের মেয়ে। তার সময় লেগেছ ৪ ঘণ্টা ৫ মিনিট। সে এর আগে বাংলাদেশ গেমসে সাতটি পদকজয়ী।
বিস্ময় জাগালেন এক প্রতিবন্ধী
৬৯ বছর বয়সী মোহাম্মদ শোয়াইব। বর্তমানে ঢাকার গুলশানের বাসিন্দা। তাঁর দুই ছেলে, এক মেয়ে। তাঁর স্ত্রী নাসরিন বেগম। ছেলে দুটি বিদেশে। চার বছর বয়সে পোলিও আক্রান্ত হয়ে তাঁর ডান পায়ে সমস্যা সৃষ্টি হয়। তিনি ৫ ঘণ্টা ৪০ মিনিট সময় নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়, সেটাই প্রমাণ করার জন্য আমি এই বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়েছি। আমার এ বিজয় বাংলাদেশের যুবসমাজকে উৎসাহী করবে বলে আশা করছি।’
ষড়জ অ্যাডভেঞ্চারের প্রধান নির্বাহী লিপটন সরকার বলেন, এ আয়োজন যুবসমাজকে খেলাধুলা এবং অ্যাডভেঞ্চারে আগ্রহী করে তুলবে।
ইউনাইটেড সিকিউরিটিজ লিমিটেড ও অফরোড বাংলাদেশ–এর আয়োজনে ট্যুরিজম বোর্ড ও পর্যটন করপোরেশন ও কোস্টগার্ডের সহায়তায় এডিবল অয়েল লিমিটেডের ব্র্যান্ড ‘ফরচুন’–এর পৃষ্ঠপোষকতায় এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
২০০৬ সালের ১৪ জানুয়ারি বাংলা চ্যানেলের যাত্রা শুরু হয়। মূলত এটির স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন প্রয়াত কাজী হামিদুল হক। যিনি নিজেও একজন বিখ্যাত আন্ডারওয়াটার ফটোগ্রাফার ও স্কুবা ডাইভার ছিলেন। তাঁর তত্ত্বাবধানেই প্রথমবারের মতো ফজলুল কবির সিনা, লিপটন সরকার এবং সালমান সাঈদ ২০০৬ সালে ‘বাংলা চ্যানেল’ পাড়ি দেন।