শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ২৬ দিন পর নিজের বাসভবন থেকে বের হয়ে তাঁর কার্যালয়ে গিয়েছেন। আজ শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিতে তিনি নিজের কার্যালয়ে যান। বৈঠক শেষে আধা ঘণ্টা পর তিনি পুনরায় বাসভবনে ফেরেন।
এর আগে গত ১৬ জানুয়ারি উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে শিক্ষার্থীদের দ্বারা অবরুদ্ধ হয়েছিলেন। সেদিন পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে এবং তাঁদের লক্ষ্য করে শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে উপাচার্যকে মুক্ত করে বাসভবনে নিয়ে যায়। এর পর থেকে উপাচার্য তাঁর বাসভবনেই অবস্থান করছিলেন। এক মাস ধরে শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন চলছে।
শাবিপ্রবির উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করতে আজ শুক্রবার সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে বিমানযোগে সিলেটে পৌঁছান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা। সিলেট সার্কিট হাউসে বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা সোয়া ছয়টা পর্যন্ত শিক্ষামন্ত্রী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের পর শিক্ষামন্ত্রী সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটের দিকে শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে যান। সেখানে গিয়ে প্রথমেই তিনি আন্দোলনরত কয়েক শ শিক্ষার্থীকে নিয়ে ক্যাম্পাসে অবস্থিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নিয়েও তিনি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
সন্ধ্যা সাতটার দিকে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বিশ্ববিদ্যায়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে যান। এরপর সেখানে আসেন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।
সন্ধ্যা সাতটার দিকে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বিশ্ববিদ্যায়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে যান। এরপর সেখানে আসেন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। শিক্ষামন্ত্রী উপাচার্য ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে ৭টা ৩৫ মিনিটে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। উপাচার্যের কার্যালয়ে যাওয়ার আগে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে আন্দোলনরত কয়েক শ শিক্ষার্থীর উদ্দেশে কথা বলেন। শিক্ষামন্ত্রী এ সময় বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন ব্যবস্থা, শিক্ষার পরিবেশ, শিক্ষক নিয়োগপদ্ধতি এবং উপাচার্যের পদত্যাগের বিভিন্ন কারণসমূহ আমরা শুনেছি। আবাসনসহ অন্যান্য দাবি পূরণ করা হবে। আমরা চেষ্টা করব দ্রুত সমস্যা সমাধান করে শাবিপ্রবিতে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে। আর উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়টি মহামান্য আচার্যের (রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ) এখতিয়ার। তাই তাঁকে এ বিষয়টি অবহিত করা হবে।’
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি চলে যাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ মো. আনোয়ারুল ইসলাম ও রেজিস্ট্রার মো. ইশফাকুল হোসেন সংবাদ সম্মেলন করেন। তাঁরা জানান, শিক্ষামন্ত্রী উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। শিক্ষার পরিবেশ দ্রুত ফিরিয়ে আনতে তিনি উপাচার্যকে নির্দেশনা দিয়েছেন। অন্যদিকে যেহেতু উপাচার্য দায়িত্বে থাকা অবস্থাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে, তাই উপাচার্যকে এসব ঘটনায় সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করার জন্যও পরামর্শ দিয়েছেন।
১৩ জানুয়ারি শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অসদাচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন কয়েক শ ছাত্রী। ১৬ জানুয়ারি দাবি আদায়ের লক্ষ্যে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করা অবস্থায় পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে এবং তাঁদের লক্ষ্য করে শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। পরে এই আন্দোলন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রূপ নেয়।
প্রথম ছয় দিনে দাবি পূরণ না হওয়ায় ১৯ জানুয়ারি বেলা ৩টা থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আমরণ অনশনে বসেন ২৪ শিক্ষার্থী। ২৬ জানুয়ারি সকালে অনশনস্থলে এসে লেখক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক মুহম্মদ জাফর ইকবাল শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান। তবে শিক্ষার্থীরা অনশন ভাঙলেও উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন। এর মধ্যে গতকাল সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. আলমগীর কবীরকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন প্রক্টর নিয়োগ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর আগে ৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক জহির উদ্দিন আহমদকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। উপাচার্যের পদত্যাগের পাশাপাশি এই দুজনের পদত্যাগও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা চেয়েছিলেন।