মায়ের মুখে যেন ভুবন ভোলানো হাসি। চোখে আনন্দাশ্রু। ২০ বছর পর সন্তানকে খুঁজে পেয়ে মা অনেকটাই বাক্রুদ্ধ। এই দৃশ্য দেখা গেল বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে।
সন্তান ফিরে পেয়ে মা ফজিলাতুন নেসা (৭৫) জানান, তিনি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার মিজমিজি গ্রামে বসবাস করেন। তাঁর স্বামী মৃত ফটিক চান। ১৯৯৯ সালে তাঁর ছেলে মাসুদ মিয়া বাড়ি থেকে কাজের সন্ধানে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। নিখোঁজ ছেলের সন্ধানের জন্য কবিরাজ ও বিভিন্ন মানুষের তথ্যের ভিত্তিতে তিনি দেশের সব কটি জেলা ঘুরেছেন। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তানেও গিয়েছিলেন। নিখোঁজ ছেলের খোঁজে জমিজমা ও বসতভিটার প্রায় সবই বিক্রি করেন তিনি। এর মধ্যে চার মাস আগে এক আত্মীয়র মাধ্যমে জানতে পারেন, সোনারগাঁয়ের পানাম নগরে তাঁর ছেলের মতো দেখতে একজন মানসিক প্রতিবন্ধী ২০ বছর ধরে বিভিন্ন সড়কে ঘোরাফেরা করছে। পরে পানাম নগরে এসে দেখেন, মানসিক প্রতিবন্ধী ওই যুবকের পিঠের ডান পাশে আঘাতের চিহ্ন, বাঁ কানটি বাঁকা, যা তাঁর ছেলেরও ছিল। অর্থাৎ যুবকের চেহারাসহ সবকিছুর সঙ্গেই তাঁর ছেলের মিল রয়েছে। তখনই তিনি আনন্দে কেঁদে ফেলেন। পরে ছেলের খাবারের ব্যবস্থাসহ তার সেবাযত্নœকরার জন্য তিনি পানাম নগরের পাশে একটি বাড়ি ভাড়া নেন। সে বাড়িতে থেকে তিনি দিনে ও রাতে রান্না করে ছেলেকে খাওয়ান।
বৃহস্পতিবার দুপুরে পানাম নগরে গিয়ে দেখা যায়, পানাম নগরের পুরোনো একটি বাড়ির বারান্দায় বসে ছেলেকে পোলাও ও গরুর মাংস খাওয়াচ্ছেন ফজিলাতুন নেসা।
ফজিলাতুন নেসা বলেন, ‘আমার ছেলেটি কীভাবে মানসিক প্রতিবন্ধী হলো, তা জানতে পারছি না। সে আমাকে চেনে না। সুস্থ-কর্মঠ ছেলে কীভাবে প্রতিবন্ধী হলো জানি না। তবে আমি শেষ জীবনে এসে আমার বুকের ধনকে দেখতে পেলাম, এখন মরে গেলেও আর আফসোস নেই। ভালো কোনো চিকিৎসাকেন্দ্রে তার চিকিৎসা হলে হয়তো সে সুস্থ হবে। আমাকে মা বলে ডাকবে। কিন্তু চিকিৎসার এত ব্যয়ভার আমার পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়।’
সোনারগাঁ পৌরসভার মেয়র সাদেকুর রহমান বলেন, ‘এই মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলেটি ২০ বছর ধরে পানাম নগর ও আশপাশের সড়কে ঘুরেফিরে রাতে পুরোনো ভবনে ঘুমায়। স্থানীয় মানুষকে এত বছরে সে আপন করে নিয়েছে। বাক্প্রতিবন্ধী ছেলেটিকে এত বছর পর তার পরিবার খুঁজে পেয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তার পরিবার চাইলে আমরা তাকে আর্থিক সহায়তা দেব।’