বানিয়ারচর ট্র্যাজেডি

২০ বছরেও জমা দেওয়া হয়নি অভিযোগপত্র

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে বানিয়ারচর ক্যাথলিক গির্জায় বোমা হামলার ২০ বছর পূর্তি হচ্ছে আজ। ২০০১ সালে গির্জায় প্রার্থনারত অবস্থায় ওই হামলায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ১০ জন নিহত ও অর্ধশত আহত হন।

দীর্ঘদিনেও এই ঘটনায় আদালতে অভিযোগপত্র দিতে পারেনি পুলিশ। ফলে বিচারকাজই শুরু হয়নি। হতাশা ও ক্ষোভ নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন হতাহত ব্যক্তিদের পরিবার ও স্বজনেরা।

ভয়াবহ ওই বোমা হামলার ঘটনায় গির্জার পক্ষ থেকে দুটি মামলা করা হয়। একটি হত্যা মামলা। অপরটি বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা। গত ২০ বছরে ২৩ বার তদন্ত কর্মকর্তা বদল করা হয়েছে। কিন্তু অভিযোগপত্র জমা হয়নি।

এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) সুভাষ চন্দ্র জয়ধর বলেন, মামলাটি এখন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তদন্ত করছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা বারবার পরিবর্তন হওয়ার কারণে হয়তো তদন্ত ব্যাহত হচ্ছে। আদালতে অভিযোগপত্র জমা হলে বিচারকাজ শুরু হবে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক গোপালগঞ্জ মুন্সি আসাদুল্লা বলেন, ‘বানিয়াচরের ঘটনায় দুটি মামলা রয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন জঙ্গি গ্রেপ্তার হয়েছে। আমার আগে ২২ জন তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছে। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর এই মামলার তদন্তকাজ গুরুত্ব দিয়ে করছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করছি।’

বোমা হামলায় নিহত হয়েছিলেন সঞ্জীবন বাড়ৈ। তাঁর বাবা বিজেন্দ্র বাড়ৈ গতকাল বুধবার মুঠোফোনে বলেন, ‘সেই ২০০১ সাল থেকে বিচার চেয়ে আসছি। কেউ আমাদের দাবি শোনে না। বৃদ্ধ বয়সে কষ্ট করে চলতে হচ্ছে। টাকা নাই, পয়সা নাই। খাইয়া, না খাইয়া বাইচ্চা আছি। এখন আর কেউ হাওলাত দিতে চায় না। ছোয়ালডা (ছেলে) বাঁইচা থাকলে হয়তো এত কষ্ট করতে হতো না। ছোয়ালডা মরল, তার বিচারডাও পাইলাম না।’

নিহত সুমন হালদারের বাবা সুখরঞ্জন হালদার ও মা আন্না হালদার দুজনেই অসুস্থ। হাঁটাচলা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ওই ঘটনা পর তাঁরা সরকারি অনুদান হিসেবে এক লাখ টাকা পেয়েছিলেন। সেই টাকা ব্যাংকে রেখেছেন। প্রতি মাসে সেই টাকার মুনাফা পান। আর গির্জা থেকে সাহায্য পান ৫০০ টাকা। তা–ই দিয়ে কোনোমতো তাঁদের সংসার চলে।

সুমনের বাবা ও মা বলেন, ‘দীর্ঘদিন পার হয়েছে। কিন্তু ছেলের হত্যার বিচার হলো না। মরার আগে আমরা যেন বিচার পাই, সেটাই সরকারের কাছে দাবি।’

বানিয়ারচর ক্যাথলিক গির্জার দায়িত্বরত ফাদার জরেন রিংকু গমেজ বলেন, ‘প্রতিবছর এই দিনে আমরা প্রার্থনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে থাকি। কিন্তু করোনার কারনে সেসব কর্মসূচি সীমিত করা হয়েছে। সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবি, এই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নৃশংস হত্যার বিচারকাজ দ্রুত সম্পন্ন করার।’