২০ টাকা কেজির বেগুন হাত বদলেই দাম বাড়ে চার গুণ

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সবজির অন্যতম পাইকারি বাজার বগুড়ার মহাস্থান হাট। শনিবার সকালে সেখানে কৃষক এক কেজি বেগুন বিক্রি করেছেন ২০ টাকা করে। সেখান থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে বগুড়া শহর। দুপুরে শহরের সার্কিট হাউসের সামনে বসা ফতেহ আলী ও রাজাবাজারে খুচরা পর্যায়ে ক্রেতারা এই বেগুন কিনেছেন ৮০ টাকা কেজি দরে।

ইফতারির অন্যতম উপকরণ বেগুনি তৈরিতে ব্যবহৃত এই বেগুনই শুধু নয়, মহাস্থানহাটে বিক্রি হওয়া প্রায় সব ধরনের সবজি এক হাত বদলের পর বগুড়ার খুচরা বাজারে তিন থেকে চার গুণ বেশি দরে বিক্রি হয়েছে। রমজান মাসের প্রথম দিনে কাঁচা তরিতরকারি থেকে শুরু করে সব ধরনের নিত্যপণ্যের বাজার তেতে ওঠায় হিমশিম খেতে হয়েছে ক্রেতাদের। করোনাভাইরাসের সংক্রমণে কর্মহীন মানুষ বাজার করতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

ব্যবসায়ী ও আড়তদারেরা বলছেন, পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজার পর্যন্ত সবজি পরিবহনে খরচ পড়ে প্রতি কেজিতে গড়ে এক টাকা। অথচ সবজির উৎপাদন এলাকাতে হিসেবে পরিচিত বগুড়াতেই পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে আকাশ-পাতাল হেরফের সবজির দামে। রমজান আসতে না আসতে মহাস্থান হাটে পাইকারি পর্যায়ে এক দিনের ব্যবধানে সব ধরনের সবজির দাম দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ বেড়েছে। এক হাত বদলের পর ওই সবজি শহরের বাজারে আরও তিন থেকে চার গুণ বেশি দামে বিক্রি হয়েছে।

শনিবার মহাস্থানহাটের কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনাভারইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকেই মহাস্থানহাটে সব রকমের সবজি কম দামে বিক্রি হয়। রমজান মাস সামনে রেখে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় শনিবার হঠাৎ করেই সব রকমের সবজির দাম চড়া।

মহাস্থানহাটে শনিবার হাইব্রিড ও দেশি জাতের করলা প্রতি কেজি ১০ টাকা, গোল বেগুন ২০, শসা ১০, কাঁচা মরিচ ২০, মুলা ১০, পটোল ২০, বরবটি ৩০, মিষ্টিকুমড়া ৮, টমেটো ১৫, ধনেপাতা ১৫, লম্বা বেগুন ১৫, ঢ্যাঁড়স ও ঝিঙে ১০ এবং গাজর ১৫ টাকা কেজি আর লেবু ১৫ টাকা হালি দরে বিক্রি হয়েছে। তবে এক দিন আগে শুক্রবার এই হাটে হাইব্রিড করলা কেজি ৪ টাকা, শসা ৪, বেগুন ৫, গাজর ১০, পটোল ১৫, কাঁচা মরিচ ১৫, মুলা ২, বরবটি ১০, মিষ্টিকুমড়া ৫, টমেটো ৫ ও ধনেপাতা ১০ টাকা এবং লেবু প্রতি হালি ১০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শনিবার বগুড়ার ফতেহ আলী বাজারে গোল বেগুন বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়া কাঁচা মরিচ ৪০ টাকা কেজি, করলা ৩০, শসা ৪০, পটোল ৬০, মুলা ৩০, বরবটি ৬০, মিষ্টিকুমড়া ২৫, টমেটো ৪০, ধনেপাতা ১০০, ঢ্যাঁড়স ও ঝিঙে ৫০ এবং গাজর ৪০ টাকা আর লেবু ৫০ টাকা হালি দরে বিক্রি হয়েছে।

মহাস্থানহাটে শসা বিক্রি করতে আসা আলোকদিয়ার কৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষক জানে আলম বলেন, ‘এক দিন আগে এ হাটে দেশি শসা বিক্রি করেছি প্রতি কেজি ৪ টাকা দরে। শনিবার খেত থেকে ১০ মণ শসা তুলে হাটে বিক্রি করেছি ১০ টাকা কেজি দরে।’

শিবগঞ্জের রায় মাঝিড়া গ্রামের চাষি ওসমান গনি বলেন, খেত থেকে ১০ কেজি ধনেপাতা তুলে এনে বিক্রি করেছেন ১৫ টাকা কেজি দরে। এক দিন আগে এ ধনেপাতার কেজি ছিল ১০ টাকা। পীরগাছা গ্রামের কৃষক মালেক মিয়া বলেন, রোজার কারণে বাজারে সবজির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বেড়েছে।

মহাস্থানহাট আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে এক মাস ধরে এ হাটে সব ধরনের সবজি বিক্রি হচ্ছে ২ থেকে ১০ টাকা। প্রতিবছর রমজান মাস এলেই সবজির বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। এবারও রমজান মাস সামনে রেখে এ হাটে সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। বিশেষ করে রোজার ইফতারিতে ব্যবহৃত হওয়া বেগুন, কাঁচা মরিচ, ধনেপাতা, টমেটো, শসাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কাঁচা সবজির দাম এক দিনের ব্যবধানে চার গুণ পর্যন্ত বেড়েছে। এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, মহাস্থানহাট থেকে বগুড়া শহরের ফতেহ আলী বাজারের দূরত্ব ১২ কিলোমিটার। মহাস্থান থেকে ফতেহ আলী বাজার পর্যন্ত সবজি পাঠাতে সর্বোচ্চ ১ টাকা খরচ হয়।