১৪ দিন ধরে জেলে শুভ বর্মণ মেঘনায় জাল ফেলতে পারছেন না। কারণ ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা। চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল ইউনিয়নের জেলেপাড়ার এ বাসিন্দা এখন কর্মহীন। নিষেধাজ্ঞার শুরুতে মৎস্য কার্যালয় থেকে তিনি ২০ কেজি চাল পেয়েছেন। কিন্তু তা দিয়ে তাঁর সংসার চলছে না।
শুভ বলেন, ‘স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে নিয়া সংসারে খানেওয়ালা আটজন। দিনে দুই-তিন কেজি চাউলের ভাত লাগে। হেগো ২০ কেজি চাউলে কী ২২ দিনের খাওন অয়? খাইয়া না খাইয়া আছি। হুদা চাউলেই তো আর অয় না। সংসারের আরও খরচ আছে। ডাল, তেল, নুন, মাছ, তরকারিও কিনন লাগে। সরকার একটা টেয়াও দেয় নাই। পরিবারের খরচ মিডামু ক্যামনে।'
শুধু শুভ নয় অর্থ ও প্রয়োজনীয় খাদ্যসহায়তার অভাবে তাঁর মতো এভাবে মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিল উপজেলার প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার জেলে পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। উপজেলার জেলেদের মধ্যে অনেকের আবার সরকারি এ সহায়তাটুকুও জোটেনি। তাঁদের অবস্থা আরও শোচনীয়।
জেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্র জানায়, মা ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে মেঘনার চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার এলাকায় ১৪ অক্টোবর থেকে আগামী ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এ সময় ইলিশ বিক্রি, পরিবহন, বাজারজাতকরণ, সংরক্ষণ ও মজুত করাও নিষিদ্ধ।
স্থানীয় মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, দুই উপজেলায় মোট জেলে ১৪ হাজার ৪৮০ জন। মতলব উত্তর উপজেলায় জেলের সংখ্যা ৮ হাজার ৮৯৪। নিষেধাজ্ঞার ওই ২২ দিনের জন্য ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হয় কার্ডধারী ৮ হাজার ৫৯২ জনকে। বাকি ৩০২ জেলে চাল পাননি। মতলব দক্ষিণ উপজেলায় জেলে ৫ হাজার ৫৮৬ জন। চাল পেয়েছেন কার্ডধারী ৫ হাজার জেলে। বাকিরা চাল পাননি। ইলিশ রক্ষার কর্মসূচিতে পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এ চালের বরাদ্দ দেয়। তবে স্থানীয়রা বলেন, তালিকার বাইরেও অনেক জেলে আছেন এলাকায়।
এক ছডাক চাউলও পাই নাই। পরিবার নিয়া কষ্টে আছি। বাধ্য অইয়া মাঝে মাঝে মেঘনায় জাল ফালাই। ইলিশ ধইরা সংসার চালাই। কী করুম, পেডের জ্বালা তো আর নিষেধ বুঝব না।সরকারি সহায়তা না পাওয়া এক জেলে
মতলব দক্ষিণ উপজেলার কাজিরবাজার এলাকার জেলে পরিমল বর্মণ বলেন, এখন বেকার বসে আছেন। টাকাপয়সা নেই। সরকার থেকে যে ২০ কেজি চাল পেয়েছিলেন তা এক সপ্তাহে শেষ। এখন তাঁদের কেউ ধারও দিতে চায় না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এখলাশপুর এলাকার এক জেলে বলেন, ‘এক ছডাক চাউলও পাই নাই। পরিবার নিয়া কষ্টে আছি। বাধ্য অইয়া মাঝে মাঝে মেঘনায় জাল ফালাই। ইলিশ ধইরা সংসার চালাই। কী করুম, পেডের জ্বালা তো আর নিষেধ বুঝব না।’
হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট নামের একটি মানবাধিকার সংগঠনের মতলব দক্ষিণ উপজেলা শাখার আইনবিষয়ক সম্পাদক অশোক কুমার রায় বলেন, কর্মহীন জেলেদের জন্য ২০ কেজি করে চালের বরাদ্দ অপ্রতুল। তাঁদের কিছু টাকা না দেওয়ার বিষয়টি অমানবিক।
মতলব দক্ষিণের জ্যেষ্ঠ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা আকতার ও মতলব উত্তরের সহকারী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, তাঁদের উপজেলায় কার্ডধারী জেলেদের খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ না পাওয়ায় অর্থসহায়তা দেওয়া যায়নি। তাঁরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি জানাবেন।