১৭ মিনিটের নতুন ফুটেজে সেই রাতে ইকবালের ঘোরাফেরার চিত্র

গভীর রাতে মসজিদ থেকে পবিত্র কোরআন নিয়ে যাচ্ছেন এই যুবক, তিনি ইকবাল হোসেন বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ
সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে নেওয়া ছবি

কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ রাখার আগে নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেড়ান ইকবাল হোসেন। পথে দুজন নৈশপ্রহরীর সঙ্গে দেখা হয়। তাঁদের সঙ্গে কথাও বলেন। মাজার থেকে কোরআন শরিফ নিয়ে বের হওয়ার আগে মাজারের এক খাদেম ও এক হাফেজের সঙ্গে বসেও ছিলেন।

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে নতুন ভিডিও ফুটেজ পাঠিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে পুলিশ। বিভিন্ন স্থানের সিসিটিভি ক্যামেরা থেকে সংগ্রহ করা ১৬ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে সেই রাতে ইকবালের ঘোরাফেরার পূর্ণাঙ্গ চিত্র উঠে এসেছে।

এর আগে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে প্রথম ফুটেজ পাঠায় পুলিশ। দুর্গাপূজার অষ্টমীর দিন নগরের নানুয়া দিঘির উত্তর পাড়ের অস্থায়ী পূজামণ্ডপে ইকবাল হোসেন (৩৫) পবিত্র কোরআন রেখেছিলেন বলে সেই ফুটেজে শনাক্ত করা হয়। ইকবাল নগরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সুজানগরসংলগ্ন দ্বিতীয় মুরাদপুর লস্করপুকুরপাড় এলাকার বাসিন্দা।

জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ আমাদের হাতে। আমরা এখন ইকবাল হোসেনকে খুঁজছি। এর বাইরে মূল টার্গেট হলো কে এই পরিকল্পনাকারী, তাঁকে ধরা। সেই লক্ষ্যে পুলিশের বিভিন্ন দল কাজ করছে। আমরা সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করছি।’

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কুমিল্লা জেলা পুলিশের ডিআইও (জেলা গোয়েন্দা কর্মকর্তা) মনির আহম্মদ নতুন সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ গণমাধ্যমে পাঠান। ১৬ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের এই ফুটেজের প্রথমে রয়েছে, প্রতিমায় হনুমানমূর্তির গদা আছে। কিন্তু ঘটনার পর (কোরআন রাখার পর) সেটা আর ছবিতে দেখা যাচ্ছে না। পরে হনুমানের পায়ের ওপর কোরআন শরিফ দেখা যাচ্ছে।

পুলিশের পাঠানো ফুটেজ ও এর বর্ণনায় উল্লেখ আছে, ইকবাল প্রায়ই মাজারে যাতায়াত করতেন। ঘটনার আগের দিনও (১২ অক্টোবর) দিবাগত রাত আনুমানিক ৩টা ৪২ মিনিটে তাঁকে নগরের দারোগাবাড়ি মাজারে দেখা গেছে। তিনি মাজারে প্যান্ট ও গেঞ্জি পরে ঢুকছেন। ফুটেজে দেখা গেছে, মাজারের খেদমতকারী ফয়সল ও হাফেজ হুমায়ুন মসজিদে প্রবেশ করেন। এরপর ইকবাল মসজিদে প্রবেশ করেন। তিনি তাঁদের পাশে বসেন। এরপর তিনি মাজারের উত্তর দিকে চলে যান। হাফেজ হুমায়ুন ছিলেন সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা। তিনি আগে মাজার থেকে বের হয়ে যান। পরে খাদেম (কালো পোশাক পরা) ফয়সল বের হন। পরে ইকবাল দানবাক্সের ওপর থেকে কোরআন শরিফ নিয়ে মেঝেতে বসেন। এরপর কোরআন শরিফ হাতে নিয়ে মাজারের উত্তর পাশের সড়ক দিয়ে চলে যান।

মসজিদ থেকে বেরোনোয় সময় ইকবাল হোসেন

পরে তিনি চকবাজার স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও পূবালী ব্যাংক মোড় ঘুরে পূজামণ্ডপের দিকে রওনা হন। এ সময় তাঁর সঙ্গে দুজন নৈশপ্রহরীর দেখা হয়। তাঁদের সঙ্গে ইকবালের কথাও হয়। এরপর ইকবাল কোরআন হাতে নিয়ে ডিগাম্বরীতলা সড়ক দিয়ে নানুয়া দিঘির পূজামণ্ডপে প্রবেশ করেন। পরে মূল পূজামণ্ডপের বাইরে সড়কের পাশে থাকা ফুটপাতের ওপর সীতার তিনটি প্রতিমার পাশে থাকা হনুমানের প্রতিমার পায়ের ওপর কোরআন রাখেন। এরপর হনুমানের হাতে থাকা গদা কাঁধে নিয়ে চলে যান।

পুলিশ বলছে, ইকবাল দারোগাবাড়ি মসজিদ ও মাজার থেকে কোরআন হাতে নিয়ে নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে তারপর পূজামণ্ডপে রাখেন। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনওয়ারুল আজিম বলেন, ‘আমরা ইকবাল হোসেনসহ এই মামলার অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’