সংসার পাননি, বিয়েটাও স্বীকার করতে চাননি স্বামী। এ অবস্থায় দীর্ঘ ১৪ বছর বিউটি বেগম (৪২) নামের এক নারী স্বামীর পরিচয় নিশ্চিত করতে আইনি লড়াই চালিয়ে যান। এই দীর্ঘ ১৪ বছরে তিনি কখনো পোশাক কারখানায় আবার কখনো ভাইয়ের বাড়িতে সেলাইয়ের কাজ করে জীবন চালিয়েছেন।
অবশেষে আদালতের মাধ্যমে বিউটি পেলেন স্বামীর স্বীকৃতি। গত ২৬ অক্টোবর ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পারিবারিক আদালতের বিচারক মো. ফরিদুজ্জামানের দেওয়া রায়ে স্বামীর স্বীকৃতির পাশাপাশি দেনমোহর ও ভরণপোষণ বাবদ ৪ লাখ ৪৮ হাজার ৯৩৯ টাকা দিতে বিবাদীকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ভরণপোষণের জন্য প্রতি ইংরেজি মাসের ৭ তারিখের মধ্যে আগের মাসের ভরণপোষণ বাবদ ওই নারীকে আরও দুই হাজার টাকা করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। রায়ের তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে তা কার্যকর করতে বিবাদীকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বিউটি কালীগঞ্জ উপজেলার রাড়িপাড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম ইসমাইল মিনের মেয়ে। ২০০৪ সালের ২৬ জুন একই উপজেলার দামোদরপুর গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে রছুল আমিন ওরফে রাছুল আমিনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়।
বিউটি জানান, তিনি আদালত থেকে রায় পেয়েছেন। কিন্তু তাঁর স্বামী তাঁকে এখনো স্বীকৃতি দেননি। শুনেছেন স্বামী এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন। আপিলের মাধ্যমে তাঁকে দীর্ঘদিন আইনের দরজায় ঘুরতে হবে। যেটা তাঁর জীবনকে বিপর্যস্ত করে ফেলবে।
বিউটি আরও জানান, ছোট বয়সে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। সেই পক্ষে তাঁর দুটি সন্তান রয়েছে। এরপর স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। তিনি বাবার বাড়িতেই থাকতেন। এ সময় তাঁদের বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন রছুল আমিন। একপর্যায়ে তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক হয়। তখন তাঁরা গোপনে বিয়ে করে স্বামী-স্ত্রীর মতো থাকতে থাকেন। মাঝেমধ্যেই তিনি স্বামীকে তাঁর বাড়িতে নিয়ে যেতে বলতেন। পরিবারের সদস্যরাও চাপ সৃষ্টি করেন। কিন্তু রছুল আমিন তাঁকে নিয়ে যাবেন বলে ঘুরাতে থাকেন। এমনকি বাবার বাড়িতে রাখা অবস্থায় তাঁর কাছে ৮০ হাজার টাকা যৌতুক দাবি করেন। এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর তাঁর সঙ্গে রছুল আমিন যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এর পর থেকে তিনি স্বামীর স্বীকৃতি পেতে লড়াই করছেন।
বিউটি বেগম জানান, অবশেষে ২০০৭ সালের ৮ এপ্রিল তিনি ঝিনাইদহ পারিবারিক আদালতে মামলা করেন। যে মামলা চালিয়েছেন দীর্ঘ ১৪ বছর। এই ১৪ বছরে তাঁকে অন্তত ২০০ দিন আদালতে যেতে হয়েছে। এ সময় তাঁর প্রায় তিন লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। মামলা চলাকালে নিজে বাঁচার জন্য ঢাকায় পোশাক কারখানায় কাজ করতে চলে যান। সেখানে ছয় বছর কাজ করেন। এভাবে কষ্ট করে তিনি দুই সন্তানকে বড় করেছেন ও মামলার খরচ চালিয়েছেন। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন, ছেলে ইয়াসিন আরাফাত (১৯) পড়ালেখা করছেন। স্বামীর স্বীকৃতির জন্য তিনি লড়াই করে গেছেন, আদালত রায় দিয়েছেন। কিন্তু স্বামী-সংসার কোনোটাই এখনো পাননি। এমনকি ভরণপোষণের টাকাও তাঁকে দেওয়া হয়নি। ফলে তাঁকে এখনো ভাইয়ের বাড়িতে থেকে সেলাইয়ের কাজ করে জীবন চালাতে হচ্ছে।
বিউটি বেগমের ভাই তারিফ মিনে জানান, বোনের এই অবস্থা দেখে তাঁদের কষ্ট হয়। তাঁরা অসচ্ছল পরিবার। ফলে কষ্ট করেই বোন লড়ে যাচ্ছে। মা আয়েশা বেগম জানান, মেয়ের বিচার বাবা দেখে যেতে পারেননি। তিনি রায়ের খবর পেয়েছেন।
অভিযুক্ত রছুল আমিন জানান, বিউটির সঙ্গে তাঁর ছোট বেলায় প্রেম ছিল। পরে দুজনের পৃথক স্থানে বিয়ে হয়। এরপর মেয়েটির স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হলে তিনি (মেয়েটি) তাঁকে বিয়ে করতে বলেন। তিনি সেটা করেননি। যে বিয়ের কাবিন আদালতে দেওয়া হয়েছে, সেটা ঠিক নয়। তিনি এ রায়ের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন।