করোনা পরিস্থিতিতে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অর্থবছর শেষে সরকারি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ৮২ কোটি টাকা ঘাটতি হয়েছে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন হিলি স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশনের সহকারী কমিশনার মো. আবদুল হান্নান।
২০১৯-২০ অর্থবছরে হিলি স্থলবন্দরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৭১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। অর্থবছরের শেষ দিন পর্যন্ত এই স্থলবন্দরে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৮৯ কোটি টাকা। এ হিসাব অনুযায়ী ৮২ কোটি ৬১ লাখ টাকার রাজস্ব ঘাটতি।
করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে গত ২৫ মার্চ থেকে এই স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছিল। প্রায় ৭৫ দিন পর ৮ জুলাই দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়।
স্থলবন্দর শুল্ক অফিস সূত্রমতে, গত পাঁচ অর্থবছরে শুধু ২০১৭-১৮ সালে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছিল। সেবার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৯০ কোটি টাকা। তার বিপরীতে আয় হয়েছিল ১৯৮ কোটি ২৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। এ ছাড়া ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৫৬ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৩০ কোটি ৫৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১১০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৬৫ কোটি ২৩ লাখ ৯১ হাজার টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৯৫ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১৯০ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২৬৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় হয়েছে ২৩৩ কোটি ১ লাখ ৮১ হাজার টাকা।
হিলি স্থলবন্দর ভারত ও বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার অন্তর্গত হাকিমপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম। ১৯৮৬ সালে এই স্থলবন্দরটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বর্তমানে এই বন্দর দিয়ে ভারত থেকে ব্যবসায়ীরা আমদানি করছেন স্টোন, বিভিন্ন মসলাজাতীয় পণ্য, মসুর ডাল, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, শুঁটকি মাছ, মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশ, টাইলসসহ অন্য পণ্যসামগ্রী। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হচ্ছে চিটাগুড় ও রাইস ব্রান (ধানের কুঁড়া)।
স্থলবন্দর সূত্র জানায়, করোনার শুরুতে অর্থাৎ মার্চ মাসে এই বন্দরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৮ কোটি টাকা। সেখানে আদায় হয়েছে ১৭ কোটি টাকা। এপ্রিলে ২৯ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার স্থলে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা আয় হয়েছে। মে মাসে ৩০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও কোনো টাকা আয় হয়নি। সর্বশেষ ৮ জুন পুনরায় বন্দর চালু হওয়া থেকে শুরু করে ৩০ জুন পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৮ কোটি টাকা।
হিলি স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশনের সহকারী কমিশনার মো. আবদুল হান্নান বলেন, দীর্ঘ সময় বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণে রাজস্ব আয় কমে এসেছে। বন্ধ থাকাকালীন ৭৫ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল, সেখানে বন্দরের কোনো আয় হয়নি। রোজা ও ঈদের সময়গুলোতে মসলাজাতীয় পণ্যের আমদানি বেশি থাকে। এবার সেখানেও ব্যবসায়ীরা সুবিধা করতে পারেননি। তিনি বলেন, একদিকে করোনা পরিস্থিতি, অন্যদিকে বাজেট প্রণয়ন—দুটো বিষয় মিলে ঘাটতির মুখে পড়েছে হিলি স্থলবন্দর।
হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারুন-অর-রশিদ বলছেন, এই স্থলবন্দর সরকারের রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে এক সম্ভাবনাময় স্থলবন্দর। এই বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে এখানে মালামাল বিক্রির মোকাম রয়েছে। বড় বড় গুদাম আছে, যেখানে ব্যবসায়ীরা পণ্য খালাস করে সংরক্ষণ করতে পারছেন। একটা সময় অন্য জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে এই আমদানি কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বর্তমানে স্থানীয়ভাবেই শতাধিক ব্যবসায়ী এই আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তবে এই স্থলবন্দরের ভারতীয় সীমান্তে কোনো শেডের ব্যবস্থা না থাকা ও পণ্য খালাসে বন্দর এলাকা না থাকায় সেখানে চাহিদা থাকলেও বাংলাদেশ থেকে ব্যবসায়ীরা রপ্তানি কার্যক্রমে উৎসাহ হারাচ্ছেন। তিনি বলেন, যদি ভারতীয় সীমান্তেও বন্দর এলাকার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা থাকত তাহলে ব্যবসায়ীরা পণ্য রপ্তানি করতে পারতেন। অনেক পণ্যসামগ্রী রপ্তানি করে ব্যবসায়ী ও উৎপাদনকারী উভয়েই লাভবান হতেন। সেই সঙ্গে সরকারের রাজস্ব আদায়ও বৃদ্ধি পেত।
দিনাজপুর শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি সুজা-উর-রব চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে ভারতসহ পার্শ্ববর্তী দেশে রপ্তানি করার মতো অনেক পণ্যসামগ্রীই রয়েছে। বিশেষ করে কৃষিজ পণ্য উৎপাদনে আমরা অনেকখানি সক্ষমতা অর্জন করেছি। স্থলবন্দরের ভারতীয় সীমান্তে বন্দর এলাকার উন্নয়ন ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা থাকলে রপ্তানিকারক ও উৎপাদনকারী উভয়েই লাভবান হতে পারতেন।’ তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে এই বিষয়গুলো লিখিতভাবে এফবিসিসিআইকে জানানো হয়েছে। আশা রাখি উভয় দেশের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা হবে এবং উভয় দেশের ব্যবসা সম্প্রসারণ হবে।’