হারিয়ে যাওয়ার ১৩ বছর পর তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে হাসনা বানু ফিরে পেলেন তাঁর মা-বাবাকে। তাঁর বয়স যখন আট বছর, তখন হারিয়ে গিয়েছিলেন ২১ বছর বয়সী এই তরুণী।
মেয়েটির পরিবার ও হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া এলাকার মজিবুর রহমান ও ফরিদা বেগমের মেয়ে হাসনা বানু। ২০০৮ সালের জুলাই মাসে মা-বাবার সঙ্গে বেড়াতে যাচ্ছিল চট্টগ্রামের রাউজানে। পথে তিনি হারিয়ে যায়। তখন তার বয়স ছিল আট বছর। হাসনা বানুর মা-বাবা শহরের অনেক জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে মেয়েকে না পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়িতে ফেরেন।
হারিয়ে যাওয়া মেয়েটির দায়িত্ব নেন মাহবুবুল আলম নামের এক ব্যক্তি। তিনি সেই সময় চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারিতে সহকারী মহাব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি নিজের মেয়ের মতো করে হাসনাকে বড় করেছেন। মাহবুবুল হাসান ২০১৯ সালে চাকরি থেকে থেকে অবসর নেন। হাসনা বানুর বিয়ের জন্য জন্মনিবন্ধন সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রয়োজন পড়ে। মাহবুবুল আলম বিষয়টি নিয়ে তাঁর অগ্রজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক মো. মোজাফফর হোসাইনের সঙ্গে কথা বলেন। পরে অধ্যাপক মো. মোজাফফর হোসাইন তাঁর সাবেক ছাত্র সত্যজিত রায় দাশকে ফোন করে এ বিষয়ে সহযোগিতা চান।
সত্যজিৎ রায় হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে কর্মরত। তিনি তাঁর প্রিয় শিক্ষকের কাছ থেকে হাসনা বানুর সব বিবরণ শুনে তাঁর পরিচয় খুঁজে বের করার উদ্যোগ নেন। হাসনা বানু নিজের নাম, বাবা মজিবুর রহমান ও মা ফরিদা বেগম ছাড়া আর কিছু মনে করতে পারেন না। শুধু নামের সূত্র ধরেই ইউএনও সত্যজিৎ নির্বাচন অফিসে কর্মরত তাঁর এক বন্ধুর সহযোগিতা চান। সেই বন্ধু হাসনা বানুর তথ্যের ভিত্তিতে গত শনিবার রাঙামাটি লংগদু উপজেলা মাইনীমুখ এলাকায় দুই তরুণীর পরিচয়পত্রের তথ্যের মিল খুঁজে পান।
সত্যজিত রায় দাশ তাঁর সহকর্মী রাঙামাটির লংগদুর ইউএনও মঈনুল আবেদীন মাসুদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ও তাঁকে বিস্তারিত বলেন। এরপর ইউএনও মাইনুল আবেদীন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্যের সহায়তায় লংগদুতে মেয়েটির পরিবারের সন্ধান পান। পরে যাচাই-বাছাই করে হাসনা বানুর আসল পরিচয় ও বাবা-মাকে শনাক্ত করা হয়।
লংগদুর ইউএনও মাইনুল আবেদীন গত সোমবার সকালে তাঁর কার্যালয়ে ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন করেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত হন হাসনা বানুর বাবা মজিবুর রহমান ও মা ফরিদা বেগম। ভিডিও কলের অপর প্রান্তে যুক্ত হন চুনারুঘাটের ইউএনও সত্যজিৎ রায় দাশ, হাসনা বানুসহ অন্যরা। ভিডিও কলে তাঁরা একে অপরকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় হাসনা বানু আবেগে কথা বলতে পারছিলেন না। ১৩ বছর পর মেয়েকে দেখে অঝোর ধারায় কাঁদছিলেন মজিবুর রহমান ও ফরিদা দম্পতি। তাঁদের আবেগঘন মিলন দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ভিডিও কলে সংযুক্ত দুই ইএনওসহ অন্যরা।
চুনারুঘাটের ইউএনও সত্যজিৎ রায় দাশ বলেন, হাসনা বানুর পরিবার রাঙামাটি লংগদু উপজেলা মাইনীমুখ এলাকায় বসবাস করছে। হাসনা গতকাল মঙ্গলবার তাঁর পরিবারের কাছে ফিরে গেছেন।