লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার কৃষকেরা বোরো আবাদ ছেড়ে ভুট্টা চাষে ঝুঁকে পড়ছেন। তিন বছরে উপজেলায় ভুট্টা চাষ বেড়েছে প্রায় দেড় গুণ। বোরো ধান চাষে খরচ বেশি এবং লাভ কম। অথচ ভুট্টা চাষে খরচ কম এবং লাভ বেশি। তাই এবার উপজেলায় বোরো আবাদ কমে গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হাতীবান্ধা উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ২৩ হাজার ৫২৯ হেক্টর চাষযোগ্য জমি রয়েছে। এবার ১২ হাজার ৮১৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা ও ৭ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর ১০ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা ও ৮ হাজার ৫৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়। এর আগের বছর ৯ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা ও ১০ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা জানান, বোরো ধান চাষের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, হয়তোবা তা আরও কমে যাবে এবং ভুট্টা চাষ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। কারণ, বোরো চাষে সেচ খরচ বেশি এবং ভুট্টার বাজারদর ভালো। এসব কারণে বোরো বীজতলা তৈরি করার পরও কৃষকদের ভুট্টা চাষে আগ্রহ বেশি দেখা যাচ্ছে। কারণ, এতে সেচ খরচ কম।
উপজেলার ফকিরপাড়া গ্রামের কৃষক লিচু মিয়া বলেন, বাজারে বর্তমানে এক মণ (৪০ কেজি) ধান ৫৫০ থেকে ৫৭০ টাকা বিক্রি করছেন কৃষক। অপরদিকে বাজারে প্রতি মণ ভুট্টা ৮০০ থেকে ৮২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সব মিলিয়ে প্রতি মণ ধান উৎপাদনে প্রায় ৬৫০ টাকা খরচ পড়ে। আবার চরাঞ্চলের জমিতে সেচ খরচ দ্বিগুণ হয়। কারণ, ২৫ শতাংশ (এক দন) জমিতে ধান হয় ৭ থেকে ৯ মণ। একই জমিতে ভুট্টা চাষ করলে ফলন হয় ৩০ থেকে ৩৫ মণ। তবে চরাঞ্চলের জমিতে ভুট্টার ফলন আরও বেশি হয়। এতে উৎপাদন খরচ হয় সব মিলিয়ে ৫–৬ হাজার টাকা। উৎপাদন খরচ পড়ে মণপ্রতি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। তাই ভুট্টা চাষে লাভ হয় দ্বিগুণ। এ কারণে অনেক কৃষক বোরো আবাদ ছেড়ে ভুট্টা চাষ করছেন।
সম্প্রতি সরেজমিনে উপজেলার পাটিকাপাড়া, সিঙ্গিমারী, বড়খাতা, ফকিরপাড়া, সানিয়াজান ও গড্ডিমারী ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, এসব গ্রামের অধিকাংশ জমিতে কৃষকেরা ভুট্টার চাষ করেছেন। ভুট্টার গাছ বড় হয়েছে। কিছু জমিতে বোরো ধানের বীজতলা করেছেন কৃষক। এ ছাড়া চর এলাকার শত শত একর জমিতে স্থানীয় মানুষ ভুট্টা আবাদ করেছেন।
তবে কৃষকেরা অভিযোগ করে বলেন, অনেক সময় তাঁরা ভুট্টার ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। কারণ, তাঁরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ভুট্টা চাষ করলেও লাভবান হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। নির্দিষ্ট ক্রয়কেন্দ্র না থাকায় নিরুপায় হয়ে মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে বিক্রি করতে হচ্ছে।
উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের চর গড্ডিমারী গ্রামের আবদুল মজিদ (৫৫) বলেন, ‘তিস্তা নদীর ভাঙনে জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছিলাম। এখন পাঁচ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করে সারা বছর পাঁচজনের সংসার চালাচ্ছি। ওই জমিতে বোরো ধান চাষ করলে এক মাসও সংসার চালাতে পারতাম না।’
উপজেলার বাড়াইপাড়া গ্রামের কৃষক আয়নাল হোসেন জানান, এ বছর নিজের পরিবারের খাওয়ার জন্য ২৫ শতাংশ (এক দন) জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছেন তিনি। তিন বিঘা জমিতে ভুট্টা লাগিয়েছেন। কারণ, ভুট্টাতে সেচ খরচ কম লাগে। দামও ভালো পাওয়া যায়।
হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ জানান, বোরোর খেতে সেচ দিতে বেশি খরচ লাগে। এ কারণে ওই ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহ কমে গেছে। অন্যদিক ভুট্টা চাষে সেচ খরচ কম এবং ফলন বেশি। তাই কৃষকেরা ভুট্টা চাষের দিকে বেশি ঝুঁকছেন। তবে তিস্তাসহ অন্য সব নদীতে নতুন চর জাগায় ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা দ্বিগুণের বেশি ছাড়িয়ে যাবে বলে তিনি জানান।