চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনায় কমপক্ষে ৩৫ জন আহত হয়েছেন। পরে আহত ব্যক্তিদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১২২টি রাবার বুলেট নিক্ষেপ ও লাঠিপেটা করে। মঙ্গলবার বেলা ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হাজীগঞ্জ পশ্চিম বাজারে দফায় দফায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
হাজীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি হেলাল উদ্দিন মিয়াজী বলেন, তাঁরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নিয়ে ষড়যন্ত্র ও ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রতিবাদে হাজীগঞ্জ বাজারে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের আহ্বান করেন। এই সমাবেশে নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা যাতে অংশ নিতে না পারেন, এ জন্য সমাবেশ শুরুর আগেই হাজীগঞ্জ শহর ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদি হাসান রাব্বির নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের অন্য একটি গ্রুপ তাঁদের লোকজনকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এ সময় তাঁদের একটি মঞ্চ, পাশের একটি বেসরকারি হাসপাতাল, কয়েকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও যাত্রীবাহী বাস ভাঙচুর করেন হামলাকারীরা। এ ছাড়া টায়ার, কাঠের টুকরা জ্বালিয়ে তাঁরা সড়ক অবরোধের চেষ্টা করেন। হামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের অন্তত ২৫ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।
হেলাল উদ্দিন মিয়াজী দাবি করেন, স্থানীয় চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) আসনের সাংসদ মেজর (অব.) রফিকুল ইসলামের নামে মিছিল নিয়ে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীরা এই হামলা চালায়।
হাজীগঞ্জ শহর ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদি হাসান রাব্বি বলেন, প্রতিবছর তাঁরা বিজয় দিবসের র্যালি করেন। আগামীকাল বিজয় দিবস উপলক্ষে তাঁদের র্যালির প্রস্তুতিসভা ছিল আজ। এ সময় হঠাৎ খবর আসে, তাঁদের কর্মী শহর ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ফরহাদকে মারধর করা হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী গাজী মাইনুদ্দিনের ছেলে রাহীর নেতৃত্বে ফরহাদকে মারধর করা হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে গেলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এ ঘটনায় তাঁদের অন্তত ১০ জন কর্মী আহত হয়েছেন।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা আওয়ামী লীগ কমিটির এক নেতা বলেন, আগামী বছরের ৩০ জানুয়ারি হাজীগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপ সাংসদের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার প্রস্তুতি নিলে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের সূত্র জানায়, হাজীগঞ্জ উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুটি বিরোধী পক্ষ গড়ে উঠেছে। একপক্ষে রয়েছেন সাংসদ ও তাঁর অনুসারীরা, আরেক পক্ষে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও তাঁদের অনুসারীরা। আগামী ৩০ জানুয়ারি হাজীগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচন ঘিরে এই দুই পক্ষের বিরোধ আরও প্রকাশ্য হতে শুরু করেছে। পৌর নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থী করা নিয়ে দুই পক্ষের অনুসারীরা আজ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছেন।
হাজীগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মাসুদ ইকবাল ও যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন সোহেল বলেন, হাজীগঞ্জে বাজারে এই ঘটনায় যুবলীগের কোনো নেতা-কর্মীর সম্পৃক্ততা ছিল না। তবে তাঁরা জানতে পেরেছেন, সিগারেট খাওয়া নিয়ে ফরহাদ ও রাহীর তর্ক–বিতর্কের জের ধরে এই ঘটনার সূত্রপাত।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) আফজাল হোসেন বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ হাজীগঞ্জ বাজারে এ ধরনের কোনো সভা করবে বলে পুলিশকে অবগত করেনি। তারপরও ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় ৩ ঘণ্টা অবস্থান করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে। বেলা ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ প্রথমে লাঠিপেটা করে। পরে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ১২২টি রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। তবে এ ঘটনায় কোনো মামলা এখনো হয়নি। কেউ আটকও হননি।