সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ

হাওরে মাছ ধরতে কাটা হলো ফসল রক্ষা বাঁধ

বাঁধের কিছু অংশের মাটি কেটে নালা তৈরি করা হয়েছে। মাছ ধরার সুবিধার জন্য বিলের ইজারাদারদের লোকজন এটি করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মাছ ধরার জন্য কেটে দেওয়া হয়েছে একটি ফসল রক্ষা বাঁধ। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার জামখলা হাওরে
ছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার জামখলা হাওরের মধ্যে একটি বিলে মাছ ধরতে ফসল রক্ষা বাঁধ কেটে দেওয়া হয়েছে। ওই বিলের ইজারাদারের লোকজন বাঁধটি কেটে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় কৃষকেরা। তাঁরা বলছেন, এতে হাওরে থাকা ফসল ঝুঁকির মুখে পড়বে।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জামখলা হাওরটি উপজেলার দরগাপাশা ইউনিয়নে অবস্থিত। এই হাওরের বাছাডুবি বিলের মাছ আহরণ করছেন ইজারাদারের লোকজন। বিলের পাড়ের ধরমপুর ও সলফ গ্রামের পাশ দিয়ে একটি রাস্তা আছে, যেটি জামখলা হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০১৮ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এটি নির্মাণ করে। গ্রামবাসীর পরামর্শ ও মতামতের ভিত্তিতেই এটিকে স্থায়ী বাঁধ ও রাস্তা হিসেবে নির্মাণ করা হয়। গত মঙ্গলবার সকালে গ্রামের লোকজন দেখেন বাঁধের কিছু অংশের মাটি কেটে নালা তৈরি করা হয়েছে। মাছ ধরার সুবিধার জন্য বিলের ইজারাদারদের লোকজন এটি করেছেন। এই নালা দিয়ে পানিনিষ্কাশনের মাধ্যমে বিল শুকিয়ে মাছ ধরা হবে। এখন স্থানটি এভাবে খোলা থাকলে হাওরের ফসল ঝুঁকির মুখে পড়বে। কৃষকেরা বিষয়টি পাউবো ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে নীতিমালা অমান্য করে বিল শুকিয়ে মাছ ধরার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাঁরা।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, বিল শুকিয়ে মাছ আহরণের কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। তিনি যে পরামর্শ দেবেন, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গ্রামবাসীর ভাষ্য, এটি স্থায়ী বাঁধ হওয়ায় রাস্তা হিসেবে গ্রামবাসী ব্যবহার করছেন। আবার এটি ফসলও রক্ষা করছে। এটি কেটে দেওয়ায় হাওরের ফসল ঝুঁকির মুখে পড়বে। ওই লোকজন প্রভাবশালী হওয়ায় তাঁদের কোনো কিছু বলতে পারছেন না। এতে দুটি অন্যায় করা হয়েছে। একটি হলো ফসল রক্ষা বাঁধ কেটে দেওয়া হয়েছে, অপরটি হলো বিল শুকিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে। এ বিষয়ে পাউবো ও প্রশাসনকেই জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে হবে।

শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনোয়ার উজ জামান বলেন, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পাউবোর কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।

উপজেলা সমবায় কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, জামখলা হাওরের বাছাডুবি জলমহালটি বঙ্গাব্দ ১৪২৬ থেকে ১৪৩১ পর্যন্ত ছয় বছর মেয়াদে ইজারা পেয়েছে দরগাপাশা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড নামে একটি সংগঠন। এটির সভাপতি দরগাপাশা গ্রামের বাসিন্দা মো. ছানু মিয়া, সাধারণ সম্পাদক মো. সাহিদ মিয়া। তবে কাগজেপত্রে এই সমিতির নাম থাকলেও তাঁদের কাছ থেকে এটি সাবলিজ নিয়ে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন বিলের পাড়ের উমেদনগর গ্রামের কয়েকজন। তাঁরাই বাঁধ কেটেছেন। তাঁরা কারও অনুমতি নেননি।

সমিতির সভাপতি মো. ছানু মিয়া বলেন, এই খাল দিয়ে বিলের পানি নামে। এটি কেটে না দিলে পানি নামবে না। পানি না নামলে বিলের মাছ ধরা যাবে না। এর আগেও এভাবে কেটে পানি নিষ্কাশন করা হয়েছে। পরে আবার বাঁধ দেওয়া হয়েছে।

শান্তিগঞ্জ উপজেলার দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মাহবুব আলম বলেন, বাঁধটি ২০১৮ সালে দেওয়া হয়েছিল। এখন বিলের মাছ ধরার সুবিধার জন্য বাঁধের কিছু অংশ কেটে দেওয়ার খবর পেয়েছেন। সরেজমিনে বিষয়টি দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।