অবিরাজ মিয়া কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের সাভিয়ানগর ব্লকের কৃষক। এবার তিনি ১২ একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। এর মধ্যে পাঁচ একর জমিতে ব্রি-২৮ আর ৭ একর জমিতে ব্রি-২৯ জাতের ধানের আবাদ করেছেন। ব্রি–২৮ ধান কাটা শেষ। এখন ব্রি–২৯ কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
তবে ব্রি-২৮–এর ফলন নিয়ে অবিরাজ খুশি নন। চিটা আর শিলাবৃষ্টিতে অর্ধেক ধান মাটিতে মিশে গেছে। তাই এখন ২৯ ধানেই আশায় বুক বাঁধছেন তিনি। অবিরাজ মিয়া বলেন, ‘২৮ ধানে ৫ একরে ৩৫০ মণ পাওয়ার কথা। পাইছি অর্ধেক। তবে অহন আশা ২৯ নিয়া। পাকা ধানে গাছ নুইয়া আছে। পানি না বাড়লে আর পাথর (শিলা) না পড়লেই হয়। এই ধান গোলায় নিতে পারলে ২৮–এর দুঃখ আর থাকব না।’
কোনো কারণে ফসলহানি হলে পরের মৌসুমে ফসল তোলার আগ পর্যন্ত হাওরবাসীর দুর্ভোগ থাকে। গেল কয়েক বছর ফসল তুলতে কৃষকদের খুব বেশি সমস্যা হয়নি। তবে এবার ব্রি-২৮ কৃষকদের হতাশ করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক দিন আগে অষ্টগ্রাম হাওরে ব্রি-২৮ ধান কাটা শেষ হয়েছে। তবে চিটা আর শিলার আঘাতে এবার বেশির ভাগ কৃষকই প্রত্যাশা অনুযায়ী ফলন পাননি। আগামী তিন থেকে চার দিনের মধ্যে হাওরে ব্রি-২৯ ধান কাটা শুরু হবে। তাই সব কৃষকের চোখ এখন ব্রি–২৯ ধানে। কৃষকদের পাশাপাশি কৃষি বিভাগও ব্রি-২৯ ধানে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের আশা করছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, এবার অষ্টগ্রাম উপজেলায় বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৮৫ হাজার টন। ২৪ হাজার ৪০০ হেক্টর জমির আবাদ থেকে এ ধান পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ব্রি-২৮ করা হয়। তবে নানা কারণে ব্রি-২৮ ধানের ফলন ভালো হয়নি। এখন ২৯ ধানের ফলন আশা জাগাচ্ছে। ব্রি-২৯–এর হেক্টর প্রতি ৬ থেকে সাড়ে ৬ টন ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কৃষক ও কৃষি বিভাগ জানায়, হাওরের জমি এক ফসলি। মূলত বোরো ধানই এখানকার প্রধান ফসল। বোরো ধানের ফলন ভালো হলে হাওরের কোনো পরিবারে ভাতের কষ্ট হয় না। সাধারণ কৃষক পরিবারও গড়ে এক হাজার মণ ধান পেয়ে থাকেন। তবে কোনো কারণে ফসলহানি হলে পরের মৌসুমে ফসল তোলার আগ পর্যন্ত হাওরবাসীর এ দুর্ভোগ থাকে। গেল কয়েক বছর ফসল তুলতে কৃষকদের খুব বেশি সমস্যা হয়নি। তবে এবার ব্রি-২৮ কৃষকদের হতাশ করেছে।
উপজেলার সাভিয়ানগর ও আলীনগর ব্লকের উপসহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘এবার ব্রি-২৮ ধানের ফলন দেখে শুধু কৃষকের মন খারাপ হয়নি, আমরাও কষ্ট পাচ্ছিলাম। তবে ব্রি-২৯ ধানের বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে। ব্রি-২৯ কৃষকদের প্রত্যাশা পূরণ করবে।’
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ব্রি-২৯ পাকা ধানে সবকটি হাওর এখন ভরপুর। ধান কাটার জন্য কৃষি বিভাগ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এরই মধ্যে দ্রুত ধান কাটার জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রায় অর্ধশত কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিভিন্ন হাওরে ধান কাটার জন্য প্রায় তিন হাজার কৃষিশ্রমিক এখন অবস্থান করছেন।