হাওরজুড়ে ধান আর ধান

ধান প্রায় পেকে গেছে। আর তিন–চার দিনের মধ্যেই কৃষকেরা ধান কাটতে শুরু করবেন। গত বুধবার নেত্রকোনার খালিয়াজুরির পাঙ্গাসিয়া হাওরে। প্রথম আলো
ধান প্রায় পেকে গেছে। আর তিন–চার দিনের মধ্যেই কৃষকেরা ধান কাটতে শুরু করবেন। গত বুধবার নেত্রকোনার খালিয়াজুরির পাঙ্গাসিয়া হাওরে।  প্রথম আলো

মাস তিনেক আগেও নেত্রকোনার খালিয়াজুরির পাঙ্গাসিয়া হাওরের যেদিকে চোখ পড়ত, সেদিকেই শুধু পানি আর পানি ছিল। কিন্তু আজ সেখানে মাঠের পর মাঠজুড়ে শুধু ধান আর ধান।

তবে শুধু পাঙ্গাসিয়া নয়, জেলার ছোট-বড় ১৩৪টি হাওরের চিত্র প্রায় একই রকম।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলার নববর্ষ আর হাতে গোনা কয়েক দিন বাকি। চারদিকে উৎসবের আমেজ। সেই আমেজের ঢেউ লেগেছে হাওরের কৃষকের মনে। এখন বেশির ভাগ হাওরের ধান কাটার উপযোগী হয়েছে। আবহাওয়া প্রতিকূল না হলে আগামী তিন–চার দিনের মধ্যেই বোরো ধান কাটার উৎসব শুরু করবে হাওরবাসী। কাঁচি হাতে কৃষকেরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধান কাটায় ব্যস্ত থাকবেন। অবশ্য এরই মধ্যে বেশির ভাগ বড় ও মাঝারি কৃষকই ধান শুকানোর উঠান (খলা), ধান কাটা ও মাড়াই বা ভাঙানোর যন্ত্র, মাড়াইস্থল, ভ্যানগাড়ি, ঠেলাগাড়ি, গরুর গাড়ি, ধান রাখার ঘর প্রস্তুত করে রাখছেন। নতুন ধান কাটা, মাড়াই ও শুকানোর কাজে কিষান-কিষানিরা মনের আনন্দে প্রায় একটি মাস কাটান। এ অঞ্চলের কৃষকদের বোরো ফসলই একমাত্র সম্বল। এই ফসলের ওপরই নির্ভর করে কৃষকদের সারা বছরের সংসার খরচ, খাওয়াদাওয়া, চিকিৎসা, আচার-অনুষ্ঠান, সন্তানদের পড়ালেখা, আনুষঙ্গিক ব্যয়—সবই বোরো ধান ঘিরে।

গত বুধবার দুপুরে পাঙ্গাসিয়া হাওরে গিয়ে দেখা গেছে, ব্রি–২৯ জাতের ধানের শিষগুলো কিছুটা সবুজ থাকলেও ব্রি–২৮ ধানের শিষ সোনালি রং ধারণ করছে। উপজেলার পুরানহাটি গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি পাঙ্গাসিয়া হাওরে ২০ একর জমিতে বোরো আবাদ করেছি। এর মধ্যে ব্রি–২৮ লাগিয়েছি ১২ একর জমিতে। এসব ধান আর তিন–চার দিনের মধ্যেই কাটা যাবে। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার ফলন ভালো হয়েছে। তবে কিছু ধানে চিটা হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তারা বলেছেন, এটা নাকি ঠান্ডার কারণে।’

বল্লভপুর গ্রামের কৃষক মো. হেলাল মিয়া বলেন, ‘সব হাওরেই এখন শুধু ধান আর ধান। ধানের ছড়ায় মাঠ ভরে গেছে। তা দেখে মনটা জুড়িয়ে যায়।’ একই গ্রামের স্বপন দাস বলেন, ‘হাওরে সবার ধানই ভালা অইছে। তা দেখে খুশি লাগে। এখন বৃষ্টিবাদল আর বন্যা না অইলেই অয়। আমরা আর ২০–২৫ দিন পাইলেই চলব। সবাই ধান কেটে ঘরে তুলতে পারব।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নেত্রকোনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি বছর বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১ লাখ ৮১ হাজার ৯৫২ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৮৬ হাজার ৬০০ হেক্টর, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ হাজার ৬৪৮ হেক্টর বেশি। সে হিসেবে জেলায় ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১ লাখ ১১ হাজার ৯২৮ মেট্রিক টন। সাধারণত হাইব্রিড, উফশী ও স্থানীয়—এই তিন জাতের বোরো আবাদ করা হয়। এর মধ্যে অন্তত ৮৫ শতাংশ জমিতে উফশী আবাদ করা হয়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘কৃষি অধিদপ্তর যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল, তার চেয়ে অনেকটা বেশি অর্জিত হয়েছে। কৃষি উপকরণসহ আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তা সম্ভব হয়েছে। প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি না হলে এক মাসের মধ্যে সব কৃষকই ফসল নিশ্চিন্তে ঘরে তুলতে সক্ষম হবেন।’