জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৫। গতকাল শুক্রবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন গেরুয়া এলাকায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এই ঘটনার প্রতিবাদে আজ শনিবার সকালে আবাসিক হল খোলাসহ তিন দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। পরে তাঁরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন।
সকাল ১০টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। বেলা ১১টায় সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সড়ক ঘুরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। দুপুর ১২টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করছিলেন।
শিক্ষার্থীদের অপর দুই দাবি হলো, আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বহন করা ও গেরুয়া এলাকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রবেশের ফটক চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া।
সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সামিয়া ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকায় কয়েক হাজার শিক্ষার্থী মেস ও বাসাবাড়িতে ভাড়া থাকছেন। গ্রামেগঞ্জে ইন্টারনেটের সমস্যার কারণে অনলাইন ক্লাস করতে না পারা, পড়াশোনা ও টিউশনির কারণে শিক্ষার্থীরা এভাবে ভাড়া থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। শুক্রবারের সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। অবিলম্বে হল খুলে দিয়ে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’
স্থানীয় পাথালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান পারভেজ দেওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এলাকার লোকজনের মুখে শুনলাম, স্থানীয় একজনের কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চাঁদা চাওয়ায় এই মারামারির সূত্রপাত হয়েছে। তবে আমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত নই। ঘটনা শোনার পরপরই দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানের বাসায় যাই। এনামুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।’
এর আগে ১১ ফেব্রুয়ারি আশুলিয়ার পাথালিয়া ইউনিয়নের গেরুয়া বাজার এলাকায় বাতিঘর নামের একটি সংগঠন ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করে। এই টুর্নামেন্টে একটি দলের পক্ষ থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী খেলেন। খেলায় স্থানীয়দের সঙ্গে ঝামেলা হয় শিক্ষার্থীদের।
এ ঘটনার জেরে শুক্রবার বিকেলে স্থানীয় যুবকদের সঙ্গে আলোচনা করতে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী। আলোচনা চলাকালে তাঁদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে গেরুয়া বাজারের একটি ভবনে আটকে রেখে মারধর করা হয়। শিক্ষার্থীদের পাঁচটি মোটরবাইকও ভাঙচুর করেন স্থানীয় লোকজন। এরপর সন্ধ্যায় গেরুয়ার তিনটি মসজিদ থেকে মাইকিং করে স্থানীয়দের লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করার আহ্বান জানানো হয়। স্থানীয় লোকজন গেরুয়া বাজারে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে জড়ো হন। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকায় বসবাসরত শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে কয়েক শ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে গেরুয়া ফটকে অবস্থান নেন। তাঁরাও লাঠিসোঁটা, রড নিয়ে পাল্টা ধাওয়া দিতে থাকেন। রাত সোয়া ১০টায় পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এরপরও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা চলতে থাকে। পরে রাত ১১টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। রাতে অর্ধশতাধিক পুলিশ গেরুয়া ফটক ও গেরুয়া এলাকায় টহল দেয়।