হাতে ছেলের ছবি। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে মা–বাবা। এভাবেই ছেলে হত্যার বিচারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন তাঁরা। বলছেন, ছেলেকে তাঁরা আর কোনো দিন ফিরে পাবেন না। তবু হত্যার বিচার পেলে কিছুটা হলেও শান্তি পাবে ছেলের আত্মা।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত গোপালগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন ওই দুজন। তাঁরা হলেন কাশিয়ানীর সাফলীডাঙ্গা গ্রামের আরিফ মিয়া ও তাঁর স্ত্রী জেসমিন বেগম। তাঁরা ছেলে মো. শামীম মিয়ার (১২) হত্যার বিচার চান।
জেসমিন বলেন, ‘আমার ছেলে মেধাবী ছিল। তাকে বিসিএস ক্যাডার বানানোর স্বপ্ন দেখছিলাম। কিন্তু দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যা করে সে স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে।’
আমার ছেলে মেধাবী ছিল। তাকে বিসিএস ক্যাডার বানানোর স্বপ্ন দেখছিলাম। কিন্তু দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যা করে সে স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে।জেসমিন বেগম, নিহত শামীম মিয়ার মা
আরিফ ও জেসমিন জানান, তাঁদের স্কুলপড়ুয়া ছেলে শামীমকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা ব্যাটারিচালিত ভ্যান ছিনিয়ে নিয়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় একই গ্রামের জিহাদ মিয়া নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। একই ঘটনায় তাঁদের গ্রামের মামুন গাজী নামের একজনকে আটক করে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। মামুন হত্যা ও মাদক মামলার আসামি। তাঁকে ছেড়ে দেওয়ায় আরিফ ও জেসমিন ভয়ে আছেন। তাঁরা ছেলে হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
আরিফ বলেন, ‘আমি যশোর ও বরিশাল অঞ্চলে বেশি বসবাস করেছি। দুই বছর আগে গ্রামে ফিরে আসি। ভাইদের জায়গায় বাস করছি। ট্রাক চালানোর ফাঁকে ফাঁকে বাড়িতে আসা-যাওয়া করতাম। গত বছর ছেলে শামীমকে রামদিয়া শ্রীকৃষ্ণ শশী কমল উচ্চবিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করি। সে ভালো রেজাল্ট করে ২০২০ সালে সপ্তম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়। করোনার মধ্যে স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে এক মাস আগে সে ওড়াকান্দি গ্রামের সুমন তালুকদারের কাছ থেকে একটি ব্যাটারিচালিত ভ্যান ভাড়া নিয়ে যাত্রী পরিবহন শুরু করে। ২ নভেম্বর সকাল সাড়ে আটটায় ভ্যান নিয়ে বের হয়ে সে নিখোঁজ হয়। ৫ নভেম্বর তালতলা গ্রামের বসরত খালের কচুরিপানার মধ্যে থেকে পুলিশ শামীমের লাশ উদ্ধার করে।’
সঠিক তদন্তের মাধ্যমে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করে দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা হবে।মো. আজিজুর রহমান, ওসি, কাশিয়ানী থানা
আরিফ ও জেসমিন জানান, তাঁরা ধারণা করছেন, দুর্বৃত্তরা শামীমকে হত্যা করে ভ্যান ছিনিয়ে নেয়। পরে লাশ গুম করার জন্য কচুরিপানার মধ্যে লুকিয়ে রাখে। ময়নাতদন্ত শেষে ৫ নভেম্বর শামীমের লাশ দাফন করা হয়। রাতে কাশিয়ানী থানায় আরিফ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। এলাকার নেশাখোর ও মাদক ব্যবসায়ীরা এ ঘটনা ঘটাতে পারে।
জানতে চাইলে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা রামদিয়া ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) মো. লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘এ ঘটনায় আমরা ৯ নভেম্বর জিহাদ মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছি। তাঁকে ১১ নভেম্বর দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। বর্তমানে তিনি জেলহাজতে রয়েছেন। গত সোমবার মামুন গাজীকে রামদিয়া ফাঁড়িতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দিয়েছি। এ ঘটনায় তাঁর কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। মামুনের বিরুদ্ধে কোনো হত্যা মামলা নেই। ২০১৭ সালে তাঁর বিরুদ্ধে একটি মাদক মামলা হয়েছিল। আশা করছি, দ্রুত এ হত্যার রহস্য উদ্ঘাটিত হবে।’
কাশিয়ানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজিজুর রহমান বলেন, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করে দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা হবে।